মাথা গোঁজার ঠাঁই চায় নদীভাঙনে গৃহহীন দুই শতাধিক পরিবার

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের হাটপাচিলে প্রমত্তা যমুনার উন্মত্ত তাণ্ডবে গত কয়েক বছরের ভয়াবহ ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত দুইশত পরিবারের ভিটেমাটি। এরপর থেকেই বাস্তুহারা আশ্রয়হীন মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। সরকারী বাঁধের কিনারে, অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে বা কোন পতিত জায়গায় বা আজ এর বাড়ি তো কাল ওর বাড়িতে ছেলেমেয়ে কোনরকম পলিথিন ও টিনের ছাউনি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছে এসব পরিবার।
বাস্তুহারা এসব মানুষের দাবি, পায়ের তলায় একটু মাটি আর মাথার ওপরে একটি চাল। যাতে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনমজুরি করে সংসারটা চালাতে পারেন। কোনো ত্রাণ বা সাহায্য চান না তারা। তাই স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে ভিটেমাটি হারা সম্বলহীন দুই শতাধিক পরিবার।
এদিকে মাথা গোঁজার ঠাইয়ের দাবীতে উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের হাটপাচিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর শনিবার (১৪ জুন) মানববন্ধন করেছে যমুনায় ভিটেমাটি হারা দুই শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষ। এ মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, যমুনার ভাঙনে বাস্তুহারা আশ্রয়হীন বিধবা মাজেদা খাতুন, জীবন বেওয়া, আজিদা বেগম, মানিক ব্যাপারি, লেদু শেখ প্রমূখ।
এসময় বিধবা মাজেদা খাতুন জানান, অল্প বয়সেই স্বামীহারা হয়েছেন তিনি। এরপর ছোটছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনরকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ভাগ্য বিরম্বনায় এই সামান্য সুখও যেন সহ্য করেনি প্রকৃতি। নির্দয় যমুনার কড়াল গ্রাসে চলেগেছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। এখন তিনি অন্যের জায়গায় পলিথিন ও টিনের কোন রকম ছাউনি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সম্ভলহারা এই বিধবা জীবন সায়াহ্ণে এসে স্থায়ী ভাবে আশ্রয় পেতে চান।
বাস্তুহারা আজিদা বেগম, মানিক ব্যাপারি, লেদু শেখ বলেন, রাক্ষুসী যমুনা সব ক্যাইরা নিছে। ঘরবাড়িও নাই, ট্যাহা-পয়সা নাই। দিন কামাই কইরা দিন খাই, মাথার ওপর ছাদ নাই। তারা আরও জানান, অন্যের জায়গা ভাড়া নিয়া কোনরকম আশ্রয় নিলেও সেখানেও ঠিকমত টাকা না দিতে পারায় জায়গার মালিকেরা তাড়িয়ে দিচ্ছেন। এখন সরকারের কাছে তাদের চাওয়া, সহায় সম্বলহীন মানুষদের জন্য মাথা একটু গোঁজার ঠাই।
হাটপাচিল এলাকার সমাজকর্মী ইয়াসিন কবির চতুর জানান, আশ্রয়হীন এই মানুষদের মাথাগোঁজার ঠাইয়ের জন্য ঘুরেছেন সরকারি বিভিন্ন অফিসের দ্বারে দ্বারে, বিভিন্ন সংস্থার কাছে। কেউই এই অসহায় মানুষদের নিশ্চিন্তে ঘুমানোর জন্য মাথা গোজার ঠাইয়ের ব্যবস্থা করে দেয়নি। বরং কোন কোন সংস্থা উপহাস করে বলেছেন, আগে ভাইরাল হন তারপরে আশ্রয়রে ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, যমুনা ভাঙনে ঘরবাড়ী হারা বাস্তুহীন মানুষদের আশ্রয়ের জন্য উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Comments