Image description

বিসিআইসি ও বিএডিসির সার ডিলারদের গুদাম এবং বিক্রয় কেন্দ্র নির্দিষ্ট ইউনিয়নে হলেও কার্যক্রম চালান তারা পৌর এলাকায়। বেশির ভাগ সার ডিলাররা নিয়ম না মেনে তাদের ইচ্ছা মত সার বিক্রি করছেন।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌর এলাকা থেকে এক ইউনিয়নের সার অন্য ইউনিয়নে বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রায়ই বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হয়। অনেক সময় সার না পেয়ে কৃষকদেরকে ফিরে যেতে হয়।

আলমডাঙ্গা উপজেলার সকল ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বিএডিসি এবং বিসিআইসির মোট ৪৮ জন সার ডিলার রয়েছে। তার মধ্যে ২৯ জন ডিলার নিয়ম না মেনে পৌর এলাকায় বছরের পর বছর সার বিক্রি করছেন। গোডাউনে সার থাকলেও কৃষকদের বলা হয় সার সংকট। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিলেই সার পাওয়া যায়। অভিযোগ রয়েছে ডিলাররা অনেক সময় সার উত্তোলন না করেই ডিপোতেই ডিও বিক্রি করে দেন। কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে ডিলাররা বছরের পর বছর অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন।

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, ডিলাররা নির্দিষ্ট ইউনিয়নে সার বিক্রি করা শুরু না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অথবা তাদের ডিলার বাতিল করা হবে।

১৯৯৫ সালে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ও পৌর এলাকায় ১টি প্রতিষ্ঠান বিসিআইসির সার বিক্রির জন্য ডিলার বরাদ্দ পান। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৩০টি ও পৌর এলাকায় ২টি প্রতিষ্ঠান বিএডিসির সার ডিলার পায়। অবাক হলেও সত্য যে, সার বিক্রির ডিলার পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো শুরু থেকেই তাদের নির্দিষ্ট ইউনিয়নে সার বিক্রির পরিবর্তে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান মালিকরা পৌর এলাকায় সার বিক্রি করে যাচ্ছেন। ডিলাররা এতটাই চতুর যে ইউনিয়নে সাইনবোর্ড টানিয়ে ঘরের সামনে কয়েক বস্তা সার রেখে বৈধতা তৈরির চেষ্টা করেন।

বিসিআইসি ও বিএডিসির সার ডিলারদের গুদাম এবং বিক্রয় কেন্দ্র নির্দিষ্ট ইউনিয়নে হলেও কার্যক্রম চলান পৌর এলাকায়। পৌর এলাকা থেকে এক ইউনিয়ানের সার অন্য ইউনিয়ানে বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা ভোগান্তির শিকার হন।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় আলমডাঙ্গা উপজেলায় আবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ বেশি। এথানে ধান, গম, পাট, ভুট্টা, তামাক, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ হয়। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হল সার। কৃষকরা তাদের ফসলে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার ব্যবহার করেন

প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১৩৫০ টাকা, ডিএপি ১০১৫ টাকা, টিএসপি ১৩৫০ টাকা ও এমওপি ১০০০ টাকা দরে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির কথা থাকলেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন ডিলাররা। ডিলাররা ইউনিয়ন পর্যায়ে সার বিক্রি না করায় কৃষকরা দুর-দুরন্ত থেকে অতিরিক্ত সময় ও টাকা খরচ করে পৌর এলাকায় সার কিনতে যান। অনেক সময় চাহিদার তুলনায় সার কম কখনও সার না পেয়েই খালি হাতে ফিরে যান।

আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯৬ হাজার ১২৭ জন তালিকাভুক্ত কৃষক রয়েছেন। ৪৬টি ব্লকের আওতায়  ২৯ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ হয়। প্রতি বছর চাহিদার তুলনায় বেশি ফসল উৎপাদন হয়। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ পৌর এলাকায় থাকা সার ডিলারদের স্ব স্ব ইউনিয়নে সার বিক্রির নির্দেশ দিলেও তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নের ১৫ জন বিসিআইসি সার ডিলারের মধ্যে ৯ জন ও বিএডিসির ৩০ জন সার ডিলারের মধ্যে ২০ জন আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়ায় তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। চলতি বছরের জুন মাসে আলমডাঙ্গা উপজেলায় বিএডিসি ও বিসিআইসির ৪৮ জন ডিলারের মাঝে চার রকমের রাসায়নিক সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন।

কৃষকরা জানান, ফসল চাষ করা বর্তমানে বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে। সার কিনতে গিয়ে চরম ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে। হারদি ইউনিয়ন থেকে সার কিনতে আসতে হয় আলমডাঙ্গা পৌর এলাকায়। প্রতি বস্তা সার পরিবহনের জন্য ভাড়া দিতে হয় ৫০ টাকা করে। ১০ বস্তা সার নিলে ৫০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। অনেক সময় সার পাওয়া যায় না। ফসলে নির্দিষ্ট সময়ে সার দিতে না পারলে উৎপাদন হ্রাস পায়। সারের ডিলাররা সার বেশি দামে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। আবার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। আমরা সাধারণ কৃষকরা চাই স্ব স্ব ইউনিয়নে ডিলাররা ফিরে আসুক। তাহলে সকল সংকট দুর হবে। কৃষিতে প্রাণ ফিরে পাবে।

সার ডিলাররা বলেন, আমরা ইউনিয়নে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। গোডাউন পেলেই সম্ভব হবে। কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রি করছি। কেউ বেশি দামে বিক্রি করলে তার দায় তাকে বহন করতে হবে।

আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, কৃষকরা যাতে সহজে সার পায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। বরাদ্দ অনুযায়ি কৃষকরা সার পাচ্ছেন। বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি আপনার কাছ থেকে শুনলাম। কেউ যদি বেশি দামে সার বিক্রি করেন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, ডিলাররা সময় চেয়েছেন। সময় দেওয়া হয়েছে। দ্রুত তাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে সার বিক্রি করতে হবে। যারা নিজ এলাকায় গিয়ে সার বিক্রি করবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ডিলার বাতিল করা হবে। কৃষকদের সারের বিষয়ে কোন অনিয়ম করার সুযোগ নেই।