চুয়াডাঙ্গার প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দার সেলুন আর নেই
চুয়াডাঙ্গার প্রথিতযশা রাজনীতিক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা এবং চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দার সেলুন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
এ বিষয়ে তার পরিবার নিশ্চিত করেছে গনমাধ্যমকে।
সোলায়মান হক জোয়ার্দার সেলুন ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুকুটবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৬ সালের ১৫ মার্চ, চুয়াডাঙ্গা জেলায়। শিক্ষাগত জীবনে তিনি মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পাশ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং ক্রমে নিজেকে একজন জনপ্রিয় জননেতায় পরিণত করেন।
রাজনীতির মাঠে তাঁর অবস্থান ছিল সুদৃঢ় ও নিবেদিত। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি বিরোধীদলের বর্জনের প্রেক্ষিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন এবং এক পর্যায়ে হুইপ হিসেবেও দায়িত্ব পান।
শুধু রাজনীতি নয়, শিক্ষা ক্ষেত্রেও ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহ। ২০১২ সালে তিনি চুয়াডাঙ্গায় ‘ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা আজও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষাবিস্তারে ভূমিকা রেখে চলেছে।
তবে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শেষ পর্যায়ে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০২৪ সালের আগস্টে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর এবং পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তার স্ত্রীসহ পরিবারের কয়েকজনের বিদেশযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয় এবং ৩৫টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।
তাঁর মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও সাধারণ জনগণ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।
সোলায়মান হক জোয়ার্দার সেলুন একজন সংগ্রামী নেতা ছিলেন, যিনি রাজনৈতিক মাঠ, মুক্তিযুদ্ধ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নিজের ছাপ রেখে গেছেন। তাঁর কর্ম ও অবদান দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
Comments