Image description

ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি ও নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকেই ঈশ্বরদীতে তদন্তের প্রাথমিক কাজ শুরু করেন কমিটি।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিতপত্রে পাবনার সিভিল সার্জনকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে সোমবার থেকে তদন্ত কমিটিকে সংশ্লিষ্ট ডায়রিয়া এলাকায় গমন, পরিদর্শন ও তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ছয় সদস্যের এ কমিটিতে টিম লিডার করা হয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক এ এইচ এম মোস্তফা কামালকে। অন্য সদস্যরা হলেন- টেকনিক্যাল অফিসার শরিফ উদ্দিন হাসনাত, চাঁদপুর উত্তর মতলব ষাটনল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ফাহমিদা ফাইজা, খাগড়াছড়ি চেঙ্গির সহকারী সার্জন রাজেশ দেব, আইইডিসিআরের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সোহেল রানা এবং ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট সজিবুল ইসলাম।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলী এহসান বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানান, সোমবার বিকেল থেকে তারা কাজ শুরু করেছেন। কমিটি প্রথমেই ঈশ্বরদী ইপিজেড পরিদর্শন করেন।

ঈশ্বরদী ইপিজেড ডায়রিয়া মহামারি রূপ ধারণ করেছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ছয় শতাধিক ছাড়িয়েছে। রোববার দিবাগত রাত ১টায় কণা খাতুন (২৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কণা ইপিজেডের আইএইচএম কোম্পানির কোয়ালিটি কাটিং সেকশনের কর্মী ছিলেন। তিনি উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের খমিন ইসলামের স্ত্রী।

অপরদিকে, মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ৯টায় ঈশ্বরদী পৌর শহরের পিয়ারাখালী জামতলা এলাকায় সাগর হোসেনের স্ত্রী মাহফুজা খাতুন। তিনি নাকানো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানীতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ইপিজেডের সাপ্লাই পানি পান করে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি মৃতদের পরিবারের।  

এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ইপিজেড এলাকায় দুপুরের খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, বমি ও মাথা ব্যথায় শ্রমিকরা অসুস্থ হতে শুরু করেন। তাৎক্ষণিক কয়েকজন শ্রমিক ছুটি নিয়ে চলে যান। পরে মধ্যরাত থেকে শুক্রবার, শনিবার, রোববার, সোমবারও মঙ্গলবার শত শত শ্রমিক পেটের সমস্যা ও ডায়রিয়া জনিত রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিতে ঈশ্বরদী হাসপাতাল ও ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে আসেন।

ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, লালপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও আটঘরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঈশ্বরদী ইপিজেডের ডায়রিয়া আক্রান্ত কর্মীরা ভর্তি হয়েছেন। এসব হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়াও আক্রান্ত রোগীরা পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আবার অনেকেই প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়িতেই চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে তারা হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।

অপরদিকে ইপিজেডের বিপুল সংখ্যক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় ঈশ্বরদীতে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে কিছু ফার্মেসি বেশি দামে স্যালাইন ও ডায়াপার বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইপিজেডের পানি পান করে রেনেসাঁ, নাকানো, এ্যাবা ও রহিম আফরোজ, আইএইচএম, স্টিল হেয়ার, অস্কার বাংলাসহ কয়েকটি কোম্পানির প্রায় ছয় শতাধিক শ্রমিক অসুস্থতার শিকার হয়েছেন। শ্রমিকরা বলছেন, ইপিজেডে সরবরাহকৃত পানি পান করে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে সরেজমিন ঈশ্বরদী হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। স্যালাইন লাগিয়ে রোগীরা বেড সংকুলান না হওয়ায় বারান্দা, করিডোর ও সিঁড়িতে শুয়ে চিকিৎসাধীন  আছেন।

ঈশ্বরদী হাসপাতালের রেকর্ড থেকে জানা যায়, গত ২৯ মে থেকে পহেলা ২ জুন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ইপিজেডের ২৪৩ জন কর্মী হাসপাতালে ভর্তি হন। এছাড়াও গুরুতর ১০ জন রোগীকে রাজশাহী ও পাবনা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮২ জন। সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে। এছাড়াও ঈশ্বরদী হাসপাতালের মতোই ভর্তি রয়েছে লালপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

ঈশ্বরদী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এবিএম মনিরুল ইসলাম জানান, ঈশ্বরদী ইপিজেডে নারী শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি তিনি সরেজমিনে তদন্ত করেছেন এবং ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন।

ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, আজকের (মঙ্গলবার) অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আমাদের মেডিকেল সেন্টারে এবং বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিপুল খাবার স্যালাইন মজুত আছে। যাদের প্রয়োজন, তারা এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। পানি পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।