Image description

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রাঙ্গামাটিতে কয়েক দিন ধরে টানা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে জেলার পাহাড়ি ঢালে গড়ে ওঠা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও টানা বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে রাঙ্গামাটি উপজেলার বাঘাইছড়ি ও জুরাছড়িতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বসতঘর সহ পাহাড়ে উৎপাদিত বিভিন্ন ফসলাদি জমি তলিয়ে গেছে এবং জেলা- উপজেলার বিভিন্ন সড়কে পাহাড়ধস হয়েছে। তবে এখানো পর্য়ন্ত কোনো হতাহত হয়নি। 

এ অবস্থায় মানুষের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত এলাকাবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ইতোমধ্যে মোট ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার পর্যন্ত  আশ্রীত রয়েছে ৬৭২ জন। ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৩টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জমি ৬২.৮০ হেক্টর। জেলার ১০টি উপজেলায় ইতোমধ্যে শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বসতি চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে জনসাধারণকে সরে যেতে উৎসাহিত করতে মাইকিং, সচেতনতামূলক প্রচার করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরতদের জন্য জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন তিন বেলা রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হচ্ছে।

এদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, ও রাঙ্গামাটির সর্বস্তরের স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ অবস্থায় রয়েছে। জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সকল সড়কে সতর্কতার সাথে চলাচল এবং পাহাড়ি ঢালে অবস্থান করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। 

এছাড়াও রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ (মারুফ)-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক, চারজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক, শিক্ষা ও আইসিটি, রাজস্ব, এডিএম) কর্মকর্তারা সার্বিকভাবে মনিটরিং করছেন।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ (মারুফ) বলেন, আমরা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। মানুষের জীবন আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং যে কোনো দুর্যোগে আমরা সক্রিয়ভাবে জনগণের পাশে আছি। 

তিনি আরো বলেন, বিগত বছরগুলোতে ভূমিধ্বসে প্রাণহানির ভয়াবহ স্মৃতি এখনো তাজা হয়ে আছে, এ জেলার মানুষের মনে। তাই এবার দুর্যোগের আগেই জেলা প্রশাসন থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি।