Image description

চট্টগ্রামে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা। প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন স্থানে ৫ থেকে ৬ বার লোডশেডিংয়ের ঘটনা ঘটছে। একবার গেলে কমপক্ষে এক ঘণ্টা পর আসছে বিদ্যুৎ। যে কারণে বিদ্যুৎ ও পানি নিয়ে মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তির মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোথাও এতটুকু স্বস্তির পরশ নেই। আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও নেই তাপমাত্রা কমে আসার লক্ষণ। বরং সামনের দিনগুলোতে গরমের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

এছাড়াও গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা ধরনের রোগব্যাধি। নগরীর হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন বয়সী রোগীর চাপ বাড়ছে। রোগাক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম থাকায় আগামী চার-পাঁচ দিনেও গরমের মাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর চট্টগ্রামের বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। 

চট্টগ্রাম মা-শিশু জেনারেল হাসপাতালে গত কয়েকদিনে যেসব শিশু ভর্তি হয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ডায়রিয়া আক্রান্ত ছিল। এছাড়া আছে নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুরোগী। হাসপাতালের আউটডোরে (বহির্বিভাগ) প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে প্রতিদিন আরও ৭০ থেকে ৮০ শিশুকে তাদের অভিভাবকরা বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ফৌজদারহাট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে (ডায়রিয়া) প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন ভর্তি হচ্ছে। এদের বেশিরভাগই প্রাপ্তবয়স্ক।

গত কয়েকদিন ধরে গরম বাড়ার সাথে সাথেই চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার সরকারি-বেসরকারি, ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টজনিতসহ বিভিন্ন ধরনের রোগী বেড়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ নাম্বার শিশুস্বাস্থ্য ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৫৪টি। কিন্তু এখন রোগী বেড়ে যাওয়ায় অনেক শয্যায় দুজন শিশুকে রাখা হয়েছে। ভর্তিকৃত শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত ছিল ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো। 

পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, তাপমাত্র আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। এরমধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। বৈশাখের এই সময়ে তাপমাত্রা একটু বাড়তি থাকে। এদিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপমাত্রা বাড়ছে এবং তা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

এখানেই শেষ নয়, কাপ্তাইয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে পানির স্তর কমে আসায় বেড়ে গেছে অতিরিক্ত লবণের পরিমাণ। যার কারণে দৈনিক ৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সুপেয় পানি উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে ওয়াসা। ফলে নগরের অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি পাওয়া যাচ্ছে না। গোসলসহ গৃহস্থালি কাজ সারতে গিয়ে বেকাদায় পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। অনেকেই গোসল না করেই সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। কোথাও আবার সামান্য পানি মিললেও তা চাহিদা তুলনায় কম। অসহ্য গরম, তীব্র লোডশেডিং আর পানির হাহাকারে নাকাল নগরবাসী। এক্ষেত্রে সেবা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কোনোও কোনো সুখবর নেই।

অন্যান্য সময়ে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার। তবে হালদায় লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ১৫ লিটার উৎপাদন কমে এসেছে সংস্থাটির। এমন পরিস্থিতি রেশনিং করে সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এতে ভোগান্তির মাত্রা কমেনি। এক্ষেত্রে নগরবাসীকে পানি ব্যবহারে আরও যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছে বিদ্যুতের জন্য পানি উৎপাদন করতে পাচ্ছে না। 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, হালদায় লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের উৎপাদন কমে গেছে। বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে আমরা পানি না পাওয়ার অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা রেশনিং করে পাইপলাইনে পানি দেয়ার চেষ্টা করছি। বৃষ্টি না হলে এমন পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী জানান, চট্টগ্রামে গতকাল সকালে ৮৫০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় ১ হাজার ৫০ মেগাওয়াট চাহিদা ছিল। বিপরীতে সকালে ৪০০ মেগাওয়াট ও সন্ধ্যায় ২৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। 

তিনি বলেন, উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় বিতরণে সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের জনসংযোগ শাখার দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকাল ৪টায় চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ২৫২ মেগাওয়াট। বিপরীতে চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয় ১ হাজার ৮৩ মেগাওয়াট। অর্থাৎ ওই সময় ১৬৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যা ৭টায় চাহিদা ছিল ১ হাজার ৪১৩ মেগাওয়াট। বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১ হাজার ২২৭ মেগাওয়াট। অর্থাৎ এ সময়ে লোডশেডিং ছিল ১৮৬ মেগাওয়াট।

চাহিদার বিপরীতে চট্টগ্রামে সরবরাহ কম করা হলেও চট্টগ্রামে যেসব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে সেখানে গতকাল স্থানীয় চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। যার পরিমাণ ১ হাজার ৬৬৪ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চট্টগ্রামে হলেও উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়। পরে সেখান থেকে চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে ঢাকাকে লোডশেডিংমুক্ত রাখার অগ্রাধিকার দেয়ায় চট্টগ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন।

অবশ্য চট্টগ্রামে যেসব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে সেখানে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না। গ্যাস ও জ্বালানি সংকটের কারণে এমনটি হচ্ছে। 

জানা গেছে, গতকাল রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট থেকে ১৫০ মেগাওয়াট, কাপ্তাই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২ নম্বর ইউনিট থেকে ৩০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২১২ মেগাওয়াট, দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫১ মেগাওয়াট, হাটহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩২ মেগাওয়াট, ইউনাইটেড পাওয়ার থেকে ৫ মেগাওয়াট, জুলধা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০ মেগাওয়াট, মীরসরাই বিআর প্লান্টে ১৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। 

এছাড়া বাঁশখালীতে অবস্থিত এসএস পাওয়ার প্লান্ট থেকে ২৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।


মানবকণ্ঠ/এফআই