Image description

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘নির্বাচনি সমঝোতা’র আলোচনা চলছে। জোট গঠনের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হলেও, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলনসহ আটটি দল একই মঞ্চে আসার চেষ্টা করছে। এই আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টির নামও উঠে এসেছে।

বিবিসি বাংলার বরাতে জানা গেছে, ধর্মভিত্তিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক ভোট (পিআর) পদ্ধতি ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিতের দাবিতে একসঙ্গে কাজ করতে চায়। ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা ও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের বিষয়ে তাদের মধ্যে মতৈক্য রয়েছে। তবে, নেতারা জোর দিয়ে বলছেন, এটি কোনো জোট নয়, বরং দাবি আদায়ে সংঘবদ্ধভাবে মাঠে থাকার পরিকল্পনা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ‘নির্বাচনি সমঝোতা’ হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিএনপি ছাড়া প্রধান সব দলই সংখ্যানুপাতিক ভোটের বিষয়ে একমত। আমরা যারা এর পক্ষে, তাদের সঙ্গে কথা বলছি।” তিনি জানান, পিআর পদ্ধতির দাবি আদায়ে ৩১টি দলের মধ্যে প্রায় ২৫টি একমত, এবং এই ইস্যুতে তারা ঐক্যবদ্ধ। তবে, নির্বাচনি আলোচনা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, “জোট নয়, এটি নির্বাচনি সমঝোতা। যেখানে যোগ্য প্রার্থী আছে, আলোচনার মাধ্যমে সেই দলের প্রার্থীকে সমর্থন করা হবে।” তিনি আরও জানান, গণঅধিকার, এনসিপি ও এবি পার্টির সঙ্গেও এই সমঝোতার আলোচনা চলছে। তিনি মনে করেন, একদলীয় পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বিপরীতে দেশপ্রেমিক দলগুলোকে একত্রিত করতে এই সমঝোতা গুরুত্বপূর্ণ।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “জোটের ব্যাপারে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আমাদের সু-সম্পর্ক রয়েছে।” তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার আগে জোট গঠনের সম্ভাবনা কম, তবে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের জন্য আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা প্রয়োজন। তিনি মনে করেন, নির্বাচনে অংশ না নিলে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির দাবিতে আমরা ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে একমত। তবে, তারা সরাসরি নির্বাচন চায়, আর আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছি। এখানে আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে।” তিনি স্পষ্ট করেন, এটি কোনো রাজনৈতিক জোট বা সমঝোতা নয়।

গত জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধর্মভিত্তিক দলগুলোর রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। অতীতে বিএনপি-জামায়াত বা আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির জোটের নজির থাকলেও, এবার ধর্মভিত্তিক দলগুলো ‘এক বাক্সে ভোট’ স্লোগান নিয়ে ঐক্যের চেষ্টা করছে। তবে, তফসিল ঘোষণার আগে তারা পিআর পদ্ধতি ও সংস্কারের দাবিতে মাঠে সরব থাকতে চায়।