Image description

ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল মাসুকা বেগমের। সেই স্বপ্ন পূরণ করে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। চার বছর আগে রাজধানী ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগ দেন। গত সোমবার সেখানে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে গুরুতর আহত হন মাসুকা। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত মাসুকা বেগম ওরফে নিপু (৩৮) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা চিলোকুট গ্রামের চৌধুরী বাড়ির সিদ্দিক আহমেদের মেয়ে। তবে তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে জেলা শহরের মেড্ডা সবুজবাগ এলাকায় থাকেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মাসুকা ছিলেন সবার ছোট। তার মা মারা গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে বড় বোন পাপড়ি রহমানের শ্বশুরবাড়িতে তাকে দাফন করা হয়েছে।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় মাসুকা বেগম স্কুলে ইংরেজি ক্লাস নিচ্ছিলেন। বিমান বিধ্বস্তের ফলে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। মাসুকার ইচ্ছা অনুযায়ী, গতকাল বিকেলে তার মরদেহ বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি আশুগঞ্জের সোহাগপুরে নেওয়া হয় এবং সন্ধ্যা ছয়টায় দাফন সম্পন্ন হয়। তাকে শেষবারের মতো দেখতে স্বজনেরা জড়ো হলে গ্রামে শোকের পরিবেশ তৈরি হয়।

মাসুকার বোনের স্বামী খলিলুর রহমান জানান, “সোমবার বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই মাসুকার কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। ঘণ্টাখানেক পর একজন ফোন ধরে বলল, ‘মাসুকা আহত হয়েছে।’ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান মিলছিল না। রাত নয়টার দিকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে আহতদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় মাসুকার নাম পাওয়া যায়। তার সহকর্মী জানান, মাসুকার কণ্ঠনালিসহ শরীরের ৮৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে; বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম। এরপর রাত সাড়ে ১২টায় মাসুকার মৃত্যুর খবর পাই।”

খলিলুর রহমান আরও বলেন, মাসুকা মনপ্রাণ দিয়ে শিক্ষকতা করতেন। তাকে বিয়ের কথা বললে তিনি বলতেন, “বিয়ে করব না। শিক্ষার্থীরাই আমার সন্তান।”

নিহত মাসুকার বাবা সিদ্দিক আহমেদ বলেন, “১৫ বছর আগে মাসুকার মা মারা যায়। শিক্ষকতা ও আমাদের সংসারের জন্য সে আর বিয়ে করতে চায়নি। মাসুকা নিয়মিত আমার খোঁজখবর নিত; প্রতি মাসে টাকা পাঠাত। ১০-১৫ দিন আগে তার সঙ্গে কথা হয়েছিল। এত অল্প বয়সে মেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, কখনো ভাবিনি।”

মাসুকার ভাগনি ফাহমিদা খানম জানান, তার খালা মাসুকা বেগম শিক্ষকতা পেশাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি বলেন, “আমার খুব আদরের আন্টি (মাসুকা) ছিলেন। আমিও তার খুব প্রিয় ছিলাম। কয়েক দিন আগে তার সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন পরিবারের সবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। আমাদের বাড়িতে নিয়মিত আসতেন।”