Image description

দেশের সাত জেলায় বজ্রপাতে চার শিক্ষার্থীসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, নেত্রকোণায় দুইজন, চাঁদপুরে একজন, সুনামঞ্জে একজন, হবিগঞ্জে একজন ও মৌলভীবাজারে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কালবৈশাখী ঝড়ের মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লা : কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও জুয়েল ভূঁইয়া নামে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় মুরাদনগর উপজেলার ৪নং পূর্বধৈইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

তাছাড়া কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং বিল্লাল হোসেন ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (১৪) দুপুরে হালকা বৃষ্টির মাঝে মাঠে ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। তারা দুজনই স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষার্থী।

বরুয়ার বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চাঁদপুর: চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতে বিশখা সরকার (৩৫) নামের কৃষাণীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার উত্তর কচুয়া ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের রাধা গবিন্দ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

ওই কৃষাণী বাড়ির পাশের জমি থেকে খড়ের গাদা আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। মৃত বিশখা সরকার উত্তর কচুয়া ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের হরিপদের স্ত্রী। বিশখা সরকার তিন কন্যাসন্তানের জননী।

পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, বাড়ির পাশে খড়ের গাদা আনতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথে ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়েন বিশখা সরকার। পরে বজ্রপাতে আহত হন তিনি। তাকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) জাহিদ হোসাইন বলেন, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে মারা যেতে পারেন। তাকে হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান। আকাশে কালো মেঘ দেখলেই নিজেদের প্রতিরোধব্যবস্থা ও নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলেছেন এই চিকিৎসক।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের হাওরে বজ্রপাতে এক নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার তিনটি হাওরে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়।

তারা হলেন—অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ দাসের ছেলে ইন্দ্রজিত দাস (৩০) ও খয়েরপুর আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া (১৪) এবং মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামের মৃত আশ্রাব আলীর স্ত্রী ফুলেছা বেগম (৬০)।

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন এবং মিঠামইন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্পণ বিশ্বাস।

পুলিশ জানায়, ইন্দ্রজিত দাস সোমবার সকাল ১০টার দিকে হালালপুর গ্রামের পাশে হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। একই সময় স্বাধীন মিয়া খয়েরপুরের হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান। অন্যদিকে সকাল ৯টার দিকে কিশোরঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামে বাড়ির পাশে ধান মাড়াইয়ের কাজ করার সময় ফুলেছা বেগম বজ্রপাতে মারা গেছেন।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং এর হাওরে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে ঝড়বৃষ্টির সময় এই ঘটনা ঘটে।

জেলার ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান জানান, সোমবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালবাসী দাসশর ছেলে দূর্বাসা দাশ (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আহত হয় তার ভাই ভূষণ দাশ (৩৪) ও বোন সুধন্য দাশ (২৮)। এছাড়াও বজ্রপাতে বানিয়াচং উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (১৩) আহত হয়।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ১ নম্বর আটগাঁও ইউনিয়নে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার (২০) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এসময় বজ্রপাতে একটি গরুও মারা যায়।

সোমবার সকাল অনুমান ৭টায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত রিমন তালুকদার আটগাঁও গ্রামের (পাতার হাটি) জাহেদ তালুকদারের ছোট ছেলে। তিনি শাল্লা সরকারি ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে অধ্যয়নরত ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৭টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি দেখে রিমন আটগাঁও গ্রামের বুড়িজাঙ্গাল গায়ের বন হাওর থেকে গরু আনতে যায়। এসময় হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই রিমনের মৃত্যু হয়। সঙ্গে গরুটিও প্রাণ হারায়।

মৌলভীবাজার : বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামে এক চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার মাখন রবি দাস শ্রীধরপুর গ্রামের আলমাছ মিয়ার জমির ধান চুক্তিতে কেটে দিচ্ছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাখন মারা যান।

উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বজ্রপাতে চা শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। পুলিশও এসেছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য নিহতের স্বজনরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করবেন।

নেত্রকোনা : নেত্রকোনার মদনে বজ্রপাতে সোমবার ভোরে আরাফাত (১০) নামের এক মাদ্রাসার ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। আরাফাত উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামের মো. আব্দুস ছালাম মিয়ার একমাত্র ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরাফাত বাড়ির পাশের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। ফজরের নামাজের পর নিজ বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে বজ্রপাতের কবলে পড়ে। এতে  ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয় ইউএনও অলিদুজ্জামান জানান, আরাফাত নামে এক মাদ্রাসার ছাত্র বজ্রপাতে মারা গেছে খবর পেয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

অন্যদিকে রোববার রাতে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় বজ্রপাতে দিদারুল হক নামে এক মাদ্রাসার শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ১০টায় উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের হাফসা রা: আনহু মহিলা মাদ্রাসা ও আন নূর ইসলামী একাডেমির সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন।

স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। এসময় শিক্ষক দিদারুল হক বাইরে থেকে মাদ্রাসায় যাচ্ছিলেন। তখন বিকট শব্দ একটি বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পায় স্থানীয়রা। পরে মাদ্রাসার মাঠে গিয়ে দিদারুল হকের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন তারা। এসময় স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। সবশেষ আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহতের মরদেহ রাতেই তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।