মাংস বিক্রির জন্য ১৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অনুমতিপত্র নেওয়ার (লাইসেন্স) যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা কার্যকর হলে প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। সে ক্ষেত্রে মাংসের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতেই সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। জবাইখানার ফি দিতে হয়। পশু কিনে নিয়ে আসা পর্যন্ত আরও খরচ আছে। তা ছাড়া অদৃশ্য খরচের খাত তো আছেই। এর ওপর প্রাণিসম্পদ অধিদফতর যে লাইসেন্সের কথা বলছে, তা অযৌক্তিক ও অবৈধ। অফিস আদেশ জারি করার আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা বা বৈঠক করা হয়নি। তারা আরও বলছেন, বর্তমানে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে। যে লাইসেন্স ফিয়ের কথা শোনা যাচ্ছে তা কার্যকর হলে সেই মাসেংর দাম ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা হয়ে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম সময়ের আলোকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে অবগত নই। কেউ আমাদের কিছু বলেনি। খবরে দেখেছি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এটা কেন করছে তা আমার কাছে বোধগাম্য নয়। এমনিতে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে অনেকেই মাংস ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, এখন ফুটপাথ থেকে ফাইভ স্টার হোটেল পর্যন্ত সব জায়গায় ইন্ডিয়া থেকে আসা মাংস খাওয়ানো হচ্ছে। অবৈধভাবে আসা এসব মাংসের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে মাংস বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেকেই ব্যবসায় ছেড়ে দিচ্ছেন।
কাপ্তান বাজারের মাংস বিক্রেতা শাহিন আহমেদ বলেন, আমরা তো সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্স নিই। জবাইখানার ফি-ও দিই। এর ওপর আবার লাইসেন্স কেন। এত ফি দিয়ে কীভাবে মানুষকে কম দামে মাংস খাওয়াব। দাম বাড়ালে তো আপনারাই (সাংবাদিকরা) আমাদেরকে ধরবেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক অফিস আদেশ জারি করেছেন। সেটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আদেশে বলা আছে, শুধু মাংস বিক্রি নয়, জবাইখানা ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন ও পরিচালনার জন্য এই অধিদফতর থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে। এতে ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা খরচ হবে।
মাংস বা মাংসজাত পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ প্রতি সপ্তাহে ১ টনের নিচে হলে আবেদন ফি ১ হাজার, অনুমতিপত্রের ফি ১৫ হাজার ও নবায়ন ফি দেড় হাজার টাকা দিতে হবে। এক টনের বেশি, কিন্তু ৮ টনের নিচে হলে আবেদন ফি ২ হাজার, অনুমতিপত্রের ফি ২৫ হাজার ও নবায়ন ফি সাড়ে ৭ হাজার টাকা লাগবে। আর ৮ টন বা তার বেশি হলে আবেদন ফি ৩ হাজার, অনুমতিপত্রের ফি ৭০ হাজার ও নবায়ন ফি ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় মাংস বিক্রেতারা করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে থাকেন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলোয় মাংস বিক্রেতারা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নিবন্ধন নেন না। তবে অধিদফতরের এই অনুমোদন সিটি করপোরেশন এলাকায়ও নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. এমদাদুল হক তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের লাইসেন্স ছাড়া কেউ মাংসের ব্যবসা করতে পারবে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যত্রতত্র পশু জবাই পরিবেশের জন্য ক্ষতির। তা ছাড়া গবাদি পশুর অনেক রোগ আছে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকির। এসব রোগ-বালাই যেন মানবদেহে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য যত্রতত্র পশু জবাই করতে পারবে না মাংস বিক্রেতারা। কসাইখানায় পশু নিয়ে জবাই দিতে হবে। সেখানে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা আছে, সেগুলোর পর নিরাপদ জবাইয়ের মাধ্যমে মাংস সরবরাহ করতে হবে।
Comments