শালবন বিহারে তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষাসফর

"বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি। দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী" – বিশ্বকবির এই উপলব্ধি যেন আজও সত্য। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কত না ইতিহাস, কত না সৌন্দর্য। গ্রীষ্মের প্রখর তাপ উপেক্ষা করে সেই অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষায় ছুটে গিয়েছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের একদল শিক্ষার্থী। তাদের গন্তব্য ছিল কুমিল্লার ময়নামতী অঞ্চলের ঐতিহাসিক শালবন বিহার।
প্রকৃতির সবুজাভা আর গ্রীষ্মের উষ্ণতাকে উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের বাসের দীর্ঘ যাত্রাপথে গান, গল্প আর আড্ডায় মুখরিত ছিল পরিবেশ। পথে হালকা জলযোগ সেরে শিক্ষার্থীরা যখন শালবন বিহারে পৌঁছালো, তখন মধ্যাহ্নের সূর্যকিরণ চারপাশের প্রাচীন স্থাপত্যের গায়ে এক ভিন্ন আভা তৈরি করেছে।
সরকারি তিতুমীর কলেজের 'বাংলা বিভাগের' তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. অরিদুল্লাহ তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, "শালবন বিহারের শান্ত নীরবতা এবং প্রাচীন স্থাপত্য আমাকে যেন অন্য এক জগতে নিয়ে গিয়েছিল। জাদুঘরের সংগ্রহগুলো আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গভীরতা সম্পর্কে অনেক নতুন ধারণা দিয়েছে। যদিও গরমের তীব্রতা কিছুটা ভোগান্তি এনেছিল, তবুও এই ভ্রমণ আমার জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।"
প্রায় ৩৭ একর বিস্তৃত শালবন বিহার শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়, এটি যেন কালের সাক্ষী। লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এই বিহারের প্রতিটি ইট-পাথর বহন করছে অতীতের গৌরবময় ইতিহাস। ধারণা করা হয়, এক সময় এই অঞ্চলের শাল-গজারির ঘন বনানীর মাঝেই নির্মিত হয়েছিল এই বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র।
সুব্রত পাল নামের আরেক শিক্ষার্থী এই আয়োজনের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, "এমন ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থানে আসতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। বন্ধুদের সাথে প্রাণবন্ত আড্ডা এবং এখানকার সৌন্দর্য আমাকে সারাক্ষণ সতেজ রেখেছে।"
শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বিহারের প্রতিটি প্রাঙ্গণ। ফটোসেশন, গান আর বিভিন্ন আনন্দ আয়োজনে দিনভর ছিল উৎসবের আমেজ। লাদেন নামের এক শিক্ষার্থী মনে করেন, এই ধরনের শিক্ষাসফর শুধু জ্ঞানার্জনই নয়, বরং বন্ধুদের মাঝে বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।
অমূল্য প্রত্নসম্পদের এই স্থানটি পূর্বে শালবন রাজার বাড়ি হিসেবে পরিচিত থাকলেও, ১৯৫৫ সালের খননের পর এখানে একটি বিশাল বৌদ্ধবিহারের নকশা উন্মোচিত হয়। আবিষ্কৃত হয় ১১৫টি ভিক্ষুকক্ষ। ঐতিহাসিক নিদর্শন আর স্থাপত্যশৈলীর টানে আজও অসংখ্য পর্যটক ছুটে আসেন শালবন বিহারে।
Comments