Image description

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েলের দাবির সত্যতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা। ইসরায়েল দাবি করেছে যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছিল এবং তা ঠেকাতেই তারা হামলা চালিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা এই দাবি সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ইরান এখনো পরমাণু বোমা বানানোর সক্ষমতা অর্জন থেকে অন্তত তিন বছর দূরে রয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন চারটি স্বতন্ত্র সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো সক্রিয় উদ্যোগ নেই। বরং তারা মূলত পারমাণবিক গবেষণা এবং জ্বালানিভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

যদিও ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে কিছুটা ক্ষতি করেছে, তেহরানের মূল ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র অক্ষত রয়ে গেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ফোর্ডোর মতো সুসংরক্ষিত ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানার মতো পর্যাপ্ত সামর্থ্য ইসরায়েলের নেই। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বোমা ও বি-২ বোমারু বিমানের মতো সক্ষমতা প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির সাবেক কূটনীতিক ব্রেট ম্যাকগার্ক এই প্রসঙ্গে বলেন, "ইসরায়েল এসব স্থাপনা অকার্যকর করতে পারে, তবে পুরোপুরি ধ্বংস করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিকভাবে জড়াতে হবে বা কূটনৈতিকভাবে কোনো সমঝোতা করতে হবে।"

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ইস্যুতে বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমরা এতে জড়িত নই। জড়াতে হতে পারে, তবে এই মুহূর্তে নই।" জি-৭ সম্মেলনে তিনি ইসরায়েল ও ইরানকে দেরি না করে সংলাপে বসার আহ্বান জানান।

পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্র তার ইউএসএস নিমিটজ ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ দ্রুত মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করছে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম নৌবাহিনীর কয়েকটি জাহাজ পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দিকে সরিয়ে নিচ্ছে।

তবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে গোয়েন্দা মূল্যায়নে ভিন্নতা নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করলেও, তাদের বিশ্লেষণে প্রায়শই ভিন্নমত দেখা যায়। গত মার্চে ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড কংগ্রেসে বলেছিলেন, "আমাদের মূল্যায়নে এখনো মনে হয় না যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বা সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"

চাপের মুখে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফক্স নিউজে দাবি করেন, "আমরা যে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছি, তা খুব পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে—ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।"

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরান অস্ত্র-উপযুক্ততার কাছাকাছি ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে, যা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যেতে পারে। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করেন, অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি ডেলিভারি সিস্টেম বা বহনের প্রযুক্তি তৈরি করাও একটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েলি হামলা যদি ইরানকে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত করে, তবে তা উল্টো ইরানকে ভবিষ্যতে অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা তারা হয়তো এতদিন নেয়নি। তবে সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত কাঠামো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।