২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেকসহ সব আসামির খালাস বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ বছর আগে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেয়। তবে হাই কোর্টের রায়ের একটি অংশ সংশোধন করা হয়েছে—হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে উল্লেখিত ‘সঠিক ও স্বাধীন তদন্তের’ অংশটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন তোলে। সমাবেশে শেখ হাসিনা ভাষণ দিচ্ছিলেন যখন বিস্ফোরণ ঘটে। হামলায় নিহতদের মধ্যে আইভী রহমান, মোহাম্মদ হানিফ, ল্যান্স করপোরাল মাহবুবুর রহমানসহ অনেকে। শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে যান, কিন্তু তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে ২০১২ সালে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, হামলা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয়। হুজি জঙ্গিরা এতে অংশ নেয়, পাকিস্তান থেকে আর্জেস গ্রেনেড আনা হয়। জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’ ছিল।
২০১৮ সালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড (বাবর, পিন্টু, হানিফসহ), ১৯ জনকে যাবজ্জীবন (তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ) এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড (সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরীসহ) দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, হামলা ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা।
আসামিরা হাই কোর্টে আপিল করলে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ সবাইকে খালাস দেয়। রায়ে বলা হয়, পুনঃতদন্ত ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ এবং সম্পূরক অভিযোগপত্র ‘অবৈধ’। পূর্ণাঙ্গ রায়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়, হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত প্রয়োজন এবং মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত।
রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে আপিল বিভাগে শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায়ে খালাস বহাল রাখা হয়, কিন্তু হাই কোর্টের তদন্ত-সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ বাদ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদসহ অন্যরা; আসামিপক্ষে এস এম শাহজাহান ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
কী ঘটেছিল সেদিন
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনা ভাষণ দিচ্ছিলেন। ভাষণ শেষে বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলে ১৬ জন নিহত, পরে সংখ্যা ২৪। পুলিশ টিয়ার শেল ছোড়ে এবং আলামত নষ্ট করার অভিযোগ ওঠে।
মামলার বৃত্তান্ত
হামলার পরদিন মতিঝিল থানায় মামলা। বিএনপি সরকারে তদন্ত এগোয়নি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নতুন তদন্ত। ২০০৮ সালে মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের অভিযোগপত্র। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অধিকতর তদন্ত। ২০১১ সালে সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানসহ ৩০ জন যোগ। ২০১৮ সালে জজ আদালতে সাজা। হাই কোর্টে ২০২৪ সালে খালাস। আপিল বিভাগে খালাস বহাল।
Comments