রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি হত্যাকাণ্ডের মামলার ২ বছর পরে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদারসহ ৩৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আলী হোসাইন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য আগামী ২১ মে দিন ঠিক করে দেন। আর এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের।
২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে ঢাকার শাজাহানপুরে খিলগাঁও রেল গেইটের কাছে যানজটে আটকে পড়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু। এসময় মোটরসাইকেলে আসা এক ব্যক্তির এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন টিপু। ঘটনায় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ওই রাতেই টিপুর স্ত্রী স্থানীয় নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় পরের বছর ৫ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি, এলাকায় আধিপত্য ও মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে হত্যা করা হয় টিপুকে। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক পদধারী নেতা এবং সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রয়েছেন।
সেখানে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ‘সত্যতা’ পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। তবে ‘এক্সএল সোহেল’ নামে এক সন্দেহভাজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারায় তাকে বাদ দিয়ে আসামি করা হয় ৩৩ জনকে।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, জিসান আহম্মেদ মন্টু, মানিক ওরফে জাফর, সুমন সিকদার মুসা, মাসুম মোহাম্মদ আকাশ, শামীম হোসাইন, তৌফিক হাসান ওরফে বাবু, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফুর রহমান ওরফে সোহেল।
এছাড়া মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল শাহরিয়ার, মাহবুবুর রহমান টিটু, নাসির উদ্দিন মানিক, মশিউর রহমান ইকরাম, ইয়াসির আরাফাত সৈকত, আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান, সেকান্দার শিকদার আকাশ, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম মাতবর, আবু সালেহ শিকদার, কিলার নাসির, ওমর ফারুক, মোহাম্মদ মারুফ খান, ইশতিয়াক আহম্মেদ জিতু, ইমরান হোসেন জিতু, রাকিবুর রহমান রাকিব, মোরশেদুল আলম পলাশ, রিফাত হোসেন, সোহেল রানা, ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, সামসুল হায়দার উচ্ছল এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামানেরও বিচার হবে এ মামলায়।
এই ৩৩ জনের মধ্যে জিসান আহমেদ মন্টু, মো. মানিক, মো. রিফাত, মো. সোহেল রানা, মো. আমিনুল, মো. কামরুজ্জামান পলাতক।
আসামিদের মধ্যে মুসা, শুটার আকাশ ও নাসির উদ্দিন মানিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিক উদ্দীন বাচ্চু গণমাধ্যমকে বলেছেন, অভিযোগ গঠনের সময় আসামিরা নিজেদের ‘নির্দোষ দাবি করে’ ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এ মামলায় ৩৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি হয়। ওইদিন অভিযোগ গঠনের জন্য সোমবার দিন ঠিক করেছিলেন বিচারক।
প্রসঙ্গত, মতিঝিল এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান রেস্তোরাঁর মালিক টিপু ঠিকাদারির কাজও করতেন। দুই মেয়ে, এক ছেলের জনক টিপু থাকতেন শাহজাহানপুরে।
Comments