শেখ হাসিনার কৃষি ভাবনা


  • অনলাইন ডেস্ক
  • ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৩:৩৭

সুইটি বণিক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষির প্রতি যে ভালোবাসা, ভালোলাগা, প্রেম তা ফুটে উঠেছে গণভবনে চাষাবাদের মাধ্যমে। তিনি গণভবনে গড়ে তুলেছেন পূর্ণাঙ্গ খামার। প্রকৃতপক্ষে গ্রামের কৃষি পরিবারের মতো পুরো গণভবনকে একটি খামার বাড়িতে পরিণত করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। গণভবনে হাঁস, মুরগি, কবুতর ও গরু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির ধান, শাক-সবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন তিনি। তিল-সরিষা, পেঁয়াজসহ মসলা জাতীয় ফসলও ফলিয়েছেন। সময় পেলেই এ সব কাজে ব্যস্ত হয়ে যান কৃষিপ্রেমী শেখ হাসিনা। তার পথ অনুসরণ করে সরকারের সকল স্তরের ব্যক্তিরা উৎসাহিত হয়ে অনাবাদি জমি আবাদি করে তুলছেন নিজ নিজ উদ্যোগে।

বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট দেখা দেয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। এছাড়া সরকারি, বেসরকারি ও দলের সকল মানুষকে কৃষি জমিকে আবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগণের প্রতি করা নিজের আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মিডিয়ার সূত্র জানায়, গণভবন আঙিনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান, ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালংশাক, ধনেপাতা, গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় বতুয়া শাক, ব্রকলি, টমেটো, লাউ, শিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাকসবজি চাষ করছেন।

জানা যায়, গণভবনে তিল, সরিষা, সরিষা খেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরণ, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা; আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল; গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচ‚ড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করছেন সরকারপ্রধান। তিনি অবসর পেলেই এসব তদারকি করেন। এসবের ফসল ফলাতে ব্যবহার করা হয় গণভবনে গরুর খামারের গোবর থেকে উৎপাদিত জৈব সার।

আরও জানা যায়, গণভবনের আঙিনায় আলাদা করে গরুর খামার, দেশি হাঁস-মুরগি, তিতির, চীনা হাঁস, রাজহাঁস, কবুতরের খামার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া পুকুরে চাষ করছেন রুই-কাতল, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকি গণভবন পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে মাছও ধরেন তিনি। সম্প্রতি গণভবনের মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জমির পেঁয়াজ কাটা হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে ৪৬ মণ। বাকি জমিতে আরো ৫০ মণের বেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে। গণভবনে ফলন পাওয়া ৪৬ মণ পেঁয়াজের দাম আসে আনুমানিক ৬৫ থেকে ৭৩ হাজার টাকা। পাঁচজনের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মাসে পাঁচ কেজি হিসেবে পেঁয়াজের প্রয়োজন ধরলে গণভবনে উৎপাদিত প্রায় ১০০ মণ পেঁয়াজে সাত-আটশ পরিবারের এক মাসের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে।

গণভবন সূত্র জানায়, উৎপাদিত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য সামান্য রেখে বাকি সব গণভবন কর্মচারী ও দরিদ্র-অসহায মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন।

উলে­খ্য, বাংলাদেশ কৃষি পরিসংখ্যান অনুসারে মোট পরিবার/খানা: ৩,৫৫,৩৩,১৮০, মোট কৃষি পরিবার/খানা: ১,৬৫,৬২,৯৭৪, কৃষিবহির্ভূত পরিবার/খানা ১,৮৯,৭০,২৬০, মোট আবাদযোগ্য জমি: ৮৮.২৯ লক্ষ হেক্টর, মোট সেচকৃত জমি:৭৮.৭৮ লক্ষ হেক্টর, আবাদযোগ্য পতিত জমি: ৪.৩১ লক্ষ হেক্টর, এক ফসলি জমি : ২১.১০ লক্ষ হেক্টর, দুই ফসলি জমি: ৪১.২৫ লক্ষ হেক্টর, তিন ফসলি জমি : ১৮.৬৬ লক্ষ হেক্টর, চার ফসলি জমি ০.১৭ লক্ষ হেক্টর, নিট ফসলি জমি: ৮১.২৫ লক্ষ হেক্টর, মোট ফসলি জমি : ১৬০.৫৬ লক্ষ হেক্টর, জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান: ১৩.২৯ (২০২০-২১), জিডিপিতে শস্য খাতের অবদান: ৭.৩৭ (স্থিরমূল্যে) ২০১৭-১৮, কৃষিতে নিয়োজিত জনশক্তি ২৪.৬৯। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় কৃষি খাত কতটা গুরুত্ব দাবি করে।

মূলত আমরা সকলে মিলেমিশে কৃষির প্রতি মনোযোগী হলে, বাংলাদেশকে, চিরসবুজ, শস্য-শ্যামল, ধন-ধান্যে, পুষ্প-পল­বে চির সুন্দরের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। মানুষ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, সচেতন, সুস্থ সবল, মানসিকভাবে স্বস্তিপূর্ণ। তাই আমাদেরও উচিত হবে, জননেত্রীর স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলা, যেন দেশ এগিয়ে চলে অফুরন্ত সম্ভাবনার পথে।

লেখক : গবেষক কলামিস্ট


poisha bazar