বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন মোট ১৪ প্রার্থী। এর মধ্যে বগুড়া-৬ আসনে হিরো আলমসহ ৯ জন এবং বগুড়া-৪ আসনে ৫ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী কোনো আসনে বৈধ ভোটের (কাস্টিং ভোট) ৮ ভাগের ১ ভাগের অধিক ভোট না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
সেই হিসাবে বগুড়া-৪ আসনে বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার ৫২৪। প্রত্যেক প্রার্থী গড়ে ৯ হাজার ৮১৬ ভোট পেলে তাদের জামানতের টাকা ফেরত পেতেন। কিন্তু এই আসনে নির্বাচিত সাংসদ এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনসহ মাত্র চারজন প্রার্থী সেই সংখ্যা পেরিয়েছেন। অন্য তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম, মুশফিকুর রহমান কাজল ও কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল।
অপর পাঁচ প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন জাকের পার্টির আবদুর রশিদ (প্রাপ্ত ভোট চার হাজার ৬৪), বাংলাদেশ কংগ্রেসের তাজ উদ্দিন ম-ল (তিন হাজার ৫৬৭), জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল (ছয় হাজার ৪৪৬), স্বতন্ত্র প্রার্থী ইলিয়াস আলী (৮৪৮) ও গোলাম মোস্তফা (দুই হাজার ৩৯০)।
সূত্র আরও জানায়, বগুড়া সদর আসনে ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে শুধু বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান রিপু ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান ছাড়া অন্য সবাই জামানত হারিয়েছেন। এই আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৯১ হাজার ৭৪২টি। এখানে প্রত্যেক প্রার্থীকে জামানত রক্ষায় ভোট পেতে হতো ১১ হাজার ৪৬৮ ভোট। তা না পাওয়ায় জামানত হারাচ্ছেন ৯ প্রার্থী।
তারা হলেন-আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম (প্রাপ্ত ভোট পাঁচ হাজার ৯৯৫), জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক হুইপ নূরুল ইসলাম ওমর (ছয় হাজার ৯৯৫), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের প্রার্থী ইমদাদুল হক ইমদাদ (এক হাজার ৩৪০), খেলাফত আন্দোলনের নজরুল ইসলাম (প্রাপ্ত ভোট ৪৬৮), জাকের পার্টির ফয়সাল বিন শফিক (প্রাপ্ত ভোট ৪১৭) ও গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন (প্রাপ্ত ভোট ১৭০), স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা সরকার বাদল (প্রাপ্ত ভোট দুই হাজার ৮১১), রাকিব হাসান (প্রাপ্ত ভোট এক হাজার ৪৪৯) ও মুক্তিযোদ্ধা মাছুদার রহমান হেলাল (প্রাপ্ত ভোট এক হাজার ৬১৮)।
হেরে গেলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা দেখা যায় : ইসি রাশেদা
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, হিরো আলম হেরে গেছেন, ওনার কষ্ট হয়েছে। তাই নানাভাবে কষ্ট প্রকাশ করছেন। উনি এটা করতেই পারেন। হিরো আলমের এজেন্টকে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল দেওয়া হয়নি কথাটি সঠিক নয়। কারণ আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি উনি নন্দিগ্রামে এজেন্ট দেননি।বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে রেজাল্ট শিট আছে, আমরা নিজেরাও একটু ক্যালকুলেট করে দেখলাম যে, কোথাও কোনো ব্যত্যয় নেই। আমাদের দেশের কালচারটা কিন্তু এরকমই। একজন প্রার্থী যখন হেরে যায় তখন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা দেখা যায়। শুধু হিরো আলম না, আমরা যতগুলো নির্বাচন করলাম সব জায়গাতেই এই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই মুখে বলে ঝড় তোলে কিন্তু প্রমাণ নিয়ে আমাদের কাছে আসে না। সিসি ক্যামেরা না থাকার কারণে ভোট পর্যবেক্ষণে সমস্যা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সিসি ক্যামেরা থাকলে অবশ্যই ভালো হয়। আমি মনে করি, সিসি ক্যামেরা থাকলে আরও অনেক বেশি স্বচ্ছভাবে কাজ করা সহজ হয়।
হিরো আলমের অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ সিইসির বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ফল পাল্টানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বৃহস্পতিবার সিইসি টেলিফোনে বগুড়া জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানকে এ নির্দেশ দেন।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, বগুড়া-৪ আসনে উপনির্বাচনে ১০ কেন্দ্রে ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ তুলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নজরে আসার পর সিইসি ফোন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ পাওয়ার পর নন্দীগ্রাম উপজেলার সব কটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে প্রাপ্ত ফলাফল পুনঃযাচাই করা হয়েছে। ঘোষিত ফলাফলের সঙ্গে ইভিএম মেশিনে পড়া ভোটের হিসাব শতভাগ নির্ভুল আছে।
বুধবার বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন হিরো আলম। নির্বাচনের ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ তুলে হিরো আলম বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বগুড়া শহরতলির এরুলিয়ায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ভোট চুরি হয়নি, ফলাফল ছিনতাই হয়েছে। ন্যায়বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও বলছেন তিনি।
Comments