
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও হজযাত্রীদের বিমানভাড়া হ্রাস চায় সরকার সমর্থিত ইসলামী দলগুলো
- ১৮ মার্চ ২০২৩, ২২:০৩

আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও হজযাত্রীদের বিমানভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইসলামী দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। এদিকে সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা অবৈধভাবে ভোজ্যতেলের মজুদ গড়ে তুলছে। অসাধু চক্রান্তে জড়িয়ে পড়ছে তেল রিফাইনারিরা। বাদ যাচ্ছে না পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারাও।
গতকাল শুক্রবার দৈনিক মানবকণ্ঠের সঙ্গে পৃথক আলাপকালে দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এসব দাবি জানান। তারা বলেন, এই দুটি বিষয়কে অবশ্যই সরকার প্রাধান্য দিতে হবে। তা না হলে সাধারণ জনগণ রজমানে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে বিমানভাড়া না কমালে হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা আগ্রহ হারাবেন। এতে করে এই বছর হজযাত্রী কমে যাবে।
এ প্রসঙ্গে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি লায়ন এম এ আউয়াল রাজধানীর কলাবাগানে তার ব্যবসায়ী অফিসে মানবকণ্ঠকে বলেন, সমকালীন পর্যালোচনায় প্রণিধানযোগ্য বিষয় হচ্ছে অসহনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি। কারও মতে এর পেছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র সক্রিয়। সীমাহীন জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ঘোলাজলে মাছ শিকারের দুরভিসন্ধির বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, মস্কো-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পণ্য সরবরাহের অন্তরায়সমূহের অজুহাতে কালোবাজারি-মজুদদারি সিন্ডিকেটের কূটকৌশল অবলম্বন সুবিদিত। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, রাজনীতি-বাণিজ্য-নাগনাগিনীর অভিশপ্ত পদচারণার সর্বত্রই সিন্ডিকেটের কারসাজি প্রতিফলিত। এসব কদর্য দুর্বৃত্তায়নের দুষ্টচক্রে দেশবাসীর জীবন-জীবিকার দৃশ্যপট দুর্বিষহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। অনতিবিলম্বে এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, মহান স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পরে মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ পুনর্গঠনে অসাধারণ প্রজ্ঞা-মেধা ও দক্ষতার সঙ্গে কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে সমধিক সফলতাকে ম্লান করার উদ্দেশ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানামুখী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান ছিল। সে সময় পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম অরাজকতা সৃষ্টিতে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ-মূল্য নির্ধারণে অস্বাভাবিক অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বঙ্গবন্ধু সরকারকে হিমশিম খেতে হয়েছিল। ঘুষ-সুদখোর, মজুদদার, চোরাকারবারি, চোরাচালানি, অন্যের জমি-বাড়ি দখলদারদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কঠোর ভাষায় শুধু সাবধান করেননি, তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বহুবার। ১৯৭২ সাল ঐতিহাসিক ৭ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, যারা শহরে সরকারি বাড়ি-গাড়ি দখল করে আছ, যারা দোকান বা অন্যের জমি দখল করে আছ, যারা মজুদ করছো, জিনিসপত্র বিক্রয় করছো না, জিনিসের দাম বাড়াবার চেষ্টা করছো, তাদের রেহাই নেই। আমি ভিক্ষা করে দুনিয়ার নানা দেশ থেকে জিনিসপত্র আনছি আমার গরিব দুঃখীদের জন্য। সেই জিনিস যারা লুটপাট করে খাচ্ছো, তাদেরও রক্ষা নাই।
ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল আরও বলেন, বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এখনো বলা যায়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন কাজের চাপ থাকলেও দেশবিরোধী অপশক্তি নানা কূটকৌশলে কর্মযজ্ঞের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। জনশ্রুতি মতে, অনুপ্রবেশকারী-পরাজিত শক্তির ছদ্মবেশী দোসররা সরকারি কিছু স্বার্থান্বেষী লোকজনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের সুবিধাবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশের মানুষদের নিয়ে হোলিখেলায় মেতে উঠে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকিয়ে দিয়ে সংঘবদ্ধভাবে অর্থনীতি ধ্বংসের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, বিমান মন্ত্রনালয় কর্তৃক হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া স্বাভাবিক ভাড়ার তিনগুণের সমান ১ লাখ ৪০ হাজার নির্ধারণ করেছে। যা হজযাত্রীদের ওপর জুলুমের শামিল। বর্তমানে ওমরাহ যাত্রীদের ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে বিমান ভাড়া ৪৫ হাজার থেকে ৪৮ হাজার টাকা। একই রুটে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া তিনগুণ করে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রনালয় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি, অযৌক্তিক এবং হজযাত্রীদের উপর জুলুমের শামিল। তিনি বলেন, এবার জ্বালানির দাম, ট্যাক্স কোনো কিছুই বাড়েনি। কিন্তু অযৌক্তিকভাবে হজযাত্রীদের বিমানভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৫২ হাজার টাকা। তা শুধু বেআইনি নয়, আল্লাহর মেহমানদের ওপর জুলুম। বিমানভাড়া বাড়িয়ে বিমান সারা বছর যা লোকসান করেছে, তা হজযাত্রীদের কাছ থেকে উসুল করার চেষ্টা করছে। এটা অন্যায় ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
তিনি আরও বলেন, বিমানভাড়া কোনোভাবে বাড়ানোর সুযোগ নেই, বরং কমানোর সুযোগ আছে। কারণ, এখন আমাদের তিনটি বড় উড়োজাহাজ বিমানবহরে যুক্ত হয়েছে। বিমানের ৪২ দিন হজযাত্রীর প্যাকেজকে অযৌক্তিক দাবি করে এটি ৩০ দিনের প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানান এম এ আউয়াল।
মানবকণ্ঠ/এসএ