manobkantha
দুর্নীতি আজকে সমাজে রন্ধে রন্ধে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করেছে

শিগগিরই সরকারপন্থী ১২টি ইসলামি ও সমমনা দলের জোট ঘোষণা

দুর্নীতি আজকে সমাজে রন্ধে রন্ধে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করেছে

আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে পবিত্র মাহে রমজানেই আগে সরকারপন্থী সমর্থিত অন্তত ১২ থেকে ১৫ টি ইসলামি ও সমমনা দল নিয়ে একটি জোট গঠনের তোড়জোড় শুর’ হয়েছে। গত কয়েকদিন যাবত দলগুলোর শীর্ষ নেতারা দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন। একাধিক বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে পবিত্র মাহে রমজানের আগেই তারা নতুন জোট গঠন বিষয়ে খুব শিগগিরই আনুষ্টানিকভাবে ঘোষণা দেবেন। এ লক্ষে গত ৪ মার্চ রাজধানীর তোপখানা রোডের বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ কেন্দ্রের কন্ফারেন্স হলে আয়োজিত এক সভায় জোট গঠনের প্রক্রিয়া উঠে আসে। ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি লায়ন এম এ আউয়ালের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ইসলামী দল ও সমমনা দলের বৃহত্তর ঐক্য এখন সময়ের দাবি শীর্ষক মতবিনিময় সভা জোট গঠনের এই প্রয়াস ব্যক্ত করেন। মূলত ওই বৈঠকের পরেই জোট গঠনের প্রক্রিয়া দ্র’ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

জোট গঠন প্রসঙ্গে গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডির কলাবাগানে নিজ ব্যবসায়ী অফিসে লায়ন এম এ আউয়াল বলেন, বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ১৫টি ইসলামী সমমনা দল নিয়ে ইসলামী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স গঠন করি। নির্বাচনের পরে আমরা ৯টি দল বিলুুপ্তি করে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি গঠন করি। তাই আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয় মূল্যবোধ অসাম্প্রায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আমরা ইসলামী অ্যালায়েন্সের পূর্নগঠনের কার্যক্রম শুর’ করছি।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে গত ৪ মার্চ ইসলামী সমমনা ১২ দল নিয়ে মতবিনিময় সভা হয়। খুব শিগগিই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ঘোষণা করব। নির্বাচনে যাতে তিনশো আসনে আমাদের প্রার্থী দিতে পারি। সেইজন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম শুর’ করছি। আমাদেও ১২ দলে আরো আসছেন, বা আসবেন প্রত্যেকেরি সারাদেশে কমবেশি সাংগঠনিক কমিটি আছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সাবেক তরিকত ফেডারশনের এই মহাসচিব বলেন, মানুষ আমাদেরকে সরকার সমর্থিত বলছে। আমরাও সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি। এই কারণেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। পুরনো আইন কানুন-পুরনো বিধি বিধিান যুযপোযোগী অনুযায়ী সংস্কার করেছেন তিনি। তার কারণে সকল ধর্মের মানুষ ধর্মীয় কর্মকাণ্ড সুন্দরভাবে পালন করতে পারছেন। অতীতে চার দলীয় জোট সরকারের সময় জঙ্গিবাদের উথান হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন খানকা শরীফ, মাজারগুলোতে বোমা হামলা হয়েছে। এতে দেশের কর্মকাণ্ড ব্যহত হয়েছে। সেইজন্য বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার সকল ধর্মের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা এই সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি অব্যাহতভাবে। এবং এই সরকারের কোন বিকল্প নেই।

সরকার সমর্থিত ১২টি দল ও নেতারা হচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট’র চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, গণতান্ত্রিক ইসলামিক পার্টির মহাসচিব সাবেক পিপি এডভোকেট মো. নূরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ জনদলের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, নেজামে ইসলাম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা হারিসুল হক, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম এ জলিল, দেশপ্রেমিক জনতা দলের চেয়ারম্যান এডভোকেট জয়নুল আবেদীন খান, পিপলস জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ড এম হায়দার আলী, তৃণমূল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আক্কাস আলী খান, দেশপ্রেমিক জনতা দলের চেয়ারম্যান এডভোকেট জয়নুল আবেদীন খান, পিপলস জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ড এম হায়দার আলী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভ‚ইয়া, বাংলাদেশ তরীকত ফ্রন্ট চেয়ারম্যান মুফতি মেহেদী হাসান বুলবুল, সাবেক রাষ্ট্র দূত ড. নীম চন্দ্র ভৌমিক প্রমুখ।

নতুন জোট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট’র চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, অতীতে আমরা বলেছিলাম আমাদের নিজের পায়ে হাটবো। কিন্তু এখন জাতীর প্রয়োজনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি, ২০০৫ সাল থেকে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে থেকে। মহাজোট নামটা আমার মুখ থেকেই এসেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যা করে আমরাও যদি তাই করতাম তাহলে আমরা আওয়ামী লীগই হতাম। মন্ত্রী হওয়ার জন্য চিন্তা করি নাই। আমি চেয়েছিলাম একটা শক্তি। যারা ন্যায়কে ন্যায় বলবে। অন্যায় কে অন্যায় বলবে। দুর্নীতিকে দুর্নীতি বলবে। কালা কে কালা বলবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো আমরা টিকে থাকার সংগ্রামে সব সময় ঐক্য ধরে রাখতে পারি না। আজ সমমনা ইসলামি দল গুলোকে এনেছেন, যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন উগ্রবাদী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে। উগ্রবাদী শুধু ইসলামি দল নয়, উগ্রবাদী বাম, জামায়াতও আছে তাদের নিষিদ্ধ করত্র হবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

এম এ আউয়াল আরো বলেন, আগামী দিনের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের মানুষকে যাতে ভালো রাখতে পারি দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে দেশের মানুষের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই। আজকে সময়ের দাবী এই ঐক্য সৃষ্টি করা। জামায়াত জঙ্গিবাদ এবং উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে আজকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকার যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে এর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু পাশাপাশি যে দুর্নীতি আজকে সমাজে রন্ধে রন্ধে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করেছে, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক করা হচ্ছে। আজকের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ দ্রব্যমূল্যে দিশেহারা। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। সরকারকে বাজার সিন্টিকেট বন্ধ করতে হবে। সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে বাজার মনিটরিং এর ব্যবস্থা করতে হবে, এই দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে। দ্রব্যমূল্য যেন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসে এজন্য প্রত্যেকটি বাজারে সরকার যেমন মনিটরিং এর ব্যবস্থা করে। এবং মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সেই ব্যবস্থাটি যেন করে সেই দাবি করছি। আমাদের পূর্বের যে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স সেটাকেই আমরা পূর্ণ গঠন করতে যাচ্ছি। তিনি গতকাল মানবকণ্ঠকে আরো বলেন, সবাই বলেছেন এজন্য একটা ঘোষণা দরকার। আমরা দ্রুতই একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করব। সবার সাথে বসবো বসে আলোচনা করব। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র নির্বাচন না, সাধারণ মানুষের যে সমস্যা গুলো সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। রাজপথেও থাকতে হবে এবং নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আমরা মদিনা সনদ অনুযায়ী একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের সকল অসা¤প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ সৃষ্টি করার জন্য কাজ করব। তাদের এই দলে আলেম ওলামা সুফি মাশায়েখরা জোটে থাকবেন বলে জানান জোটের এই নেতা।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস