manobkantha

চট্টগ্রাম বন্দরে চিনি নিয়ে ভাসছে দুই জাহাজ

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য নিয়ে ভাসছে দুই জাহাজ। মার্কিন ডলারে আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় জাহাজ দুটি থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বিলম্ব হওয়ায় বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী জাহাজগুলোর শিপিং ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘রোজার পণ্য নিয়ে বন্দরের বহির্নোঙরে দুটি জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। ব্যাংকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ঋণপত্র খুলে এসব পণ্য আমদানি করা হয়। আমদানী ব্যয় মেঠাতে না পারায় এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের অনুমতি মিলছে না। আটকে থাকা জাহাজগুলোকে প্রতিদিনই নিয়ম অনুযায়ী ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে।’

আমদানিকারকরা জানিয়েছে, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় বিদেশি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, গত ২৪ ডিসেম্বর ৫৫ হাজার ৬৫০ টন চিনি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের বহির্নোঙরে আসে জাহাজ এমভি একিলিস। এই জাহাজের চিনি আমদানিকারক এস আলম গ্রুপ। মূলত বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণপত্রের বিল পরিশোধের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় জাহাজটি থেকে পণ্য খালাসের অনুমতি মিলছে না।

গত ১৮ অক্টোবর ৫৫ হাজার টন চিনি নিয়ে বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায় এমভি ট্রঅং মিন প্রসপারিটি নামে আরেকটি জাহাজ। এটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু গ্রুপ। একটানা ৯২ দিনে জাহাজটি থেকে ২৯ হাজার ২৩৯ টন চিনি খালাস হয়েছে। ডলারে আমদানি মূল্য শোধ না করায় বাকি ২৫ হাজার ৭৫১ টন পণ্য খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না রফতানিকারক।

১২ হাজার টন পাম অয়েল নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর মালয়েশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায় এমটি সুপার ফরটি নামে একটি জাহাজ। এক কোটি ২৪ লাখ ডলার মূল্যের এই তেল আমদানি করে চট্টগ্রামের এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড। ডলার সংকটে আমদানি ব্যয় মেটাতে না পারায় পণ্য খালাস আটকে যায়। তবে দীর্ঘদিন পর এ সমস্যার সমাধান হয়েছে। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) থেকে এ জাহাজে পণ্য খালাস শুরু হয়েছে বলে চট্টগ্রাম বন্দর কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে।

এমভি কমন এটলাস নামে একটি জাহাজ চিনি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় গত ৫ জানুয়ারি। এটি ব্রাজিল থেকে ৬০ হাজার ৫০০ টন চিনি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ১৬ জানুয়ারি এ জাহাজটি জেটিতে ভিড়ে। এ জাহাজের মাধ্যমে ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভেড়ানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। জাহাজটি থেকে ওইদিন ২৩ হাজার ৬৫০ টন চিনি খালাস হলেও বাকি পণ্যের খালাস স্থগিত করে দেয় রফতানিকারক। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ডলার সংকটে ঋণপত্রের বিপরীতে আমদানি দায় পুরোপুরি পরিশোধ করতে না পারায় খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমদানি ব্যয় মেঠানোর পর এ জাহাজের বাকি মালামাল বহির্নোঙরে খালাস সম্পন্ন হয়।

এ প্রসঙ্গে এস আলম গ্রুপের বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান মহাব্যবস্থাপক আখতার হাসান বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি ব্যয় মেঠানো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে কয়েকটি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বিলম্বিত হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা নজর রাখছেন। কিছু জাহাজে সমস্যা সমাধান হয়েছে। বাকিগুলোরও শিগগিরই সমাধান হবে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ডলার সংকট বড় আকার ধারণ করেছে। এ কারনে জাহাজে পণ্য আটকে যাচ্ছে। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার ডলার ডেমারেজ গুণতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। আমদানিকারকরা এসব ডেমারেজের টাকা পণ্য থেকে তুলছেন।’

মানবকণ্ঠ/আরএইচটি