manobkantha

নতুনের অপেক্ষায় বঙ্গভবন

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন? কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের উত্তরসূরি? এ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা, গুঞ্জন। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সাক্ষাতের পর গতকাল মঙ্গলবার এটি ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’-তে পরিণত হয়। স্পিকার থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং নারীর ক্ষমতায়নের বিশ্ব রেকর্ড গড়তে দেশের প্রথম নারী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। তবে আলোচনার শীর্ষে থাকা অপর দুই বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। আজ বুধবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপরই অবশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠবে কে আসছেন বঙ্গভবনের উত্তরসূরি হিসেবে।

এদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে রুটিন কাজ হিসেবে গতকাল সংসদ ভবনে স্পিকারের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সময় ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎ শেষে নির্বাচন ভবনে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি। কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার আগে স্পিকারের সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ করতে হয়। সে অনুযায়ী স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মতবিনিময় করেছি। এরপর সিদ্ধান্ত হয়েছে যে অচিরেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের এই নির্বাচনী কর্মকর্তা বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বুধবার বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশনে সভা করব। সভা করে আমরা তফসিল উন্মুক্ত করব। কয়েক মাস ধরে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আলোচনায় ডজনের বেশি ব্যক্তির নাম থাকলেও গত দুই সপ্তাহে তালিকা সংক্ষিপ্ত হয়ে এখন তিনজনে নেমে এসেছে।

শীর্ষ তিনে রয়েছেন- জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এছাড়া সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামও উঠে এসেছে আলোচনায়।

তবে এদের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত শিরীন ২০১৩ সালের এপ্রিলে জাতীয় সংসদের সবচেয়ে তরুণ স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি এখনও এ দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনেকদিন ধরেই আলোচনায় আছেন। বিশেষ করে আবদুল হামিদ দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর শিরীন শারমিনের নাম আলোচনায় আসে। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার স্পিকার হন। তখন থেকেই এ আলোচনা চলছে।

এদিকে পরবর্তী নতুন রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলের আলোচনায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির অত্যন্ত আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত একজন ব্যক্তি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি ইআরডি সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলেও তাকে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার জন্য তিনি বিশ্বব্যাংকের কড়া সমালোচনা করেন। পরে কানাডার আদালতে দুর্নীতির সেই অভিযোগ খারিজ হয়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেকোনো সংকট তৈরি হলে সাহসিকতা, দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিনি সংকট থেকে উত্তরণে অবস্থান নিতে পারবেন, তেমন কাউকেই এ পদে বসাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক কিছু বিবেচনা করেই রাষ্ট্রপতি পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। বিশ্বস্ত, দলের আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ ও অনুগত ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে বিবেচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, তফসিল ঘোষণা না হওয়ার কারণে পরবর্তী নতুন রাষ্ট্রপতি পদে আনুষ্ঠানিক প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি এখন পর্যন্ত আলোচনার মধ্যেই রয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি পদের জন্য আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে কারা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন, তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। যেসব নাম নিয়ে দলে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে, সেগুলো খসড়া বলা চলে। চূড়ান্ত একজনকে বাছাই করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এখনও নিজের পছন্দের কথা প্রকাশ করেননি। তবে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের আলাপ-আলোচনায় পরবর্তী রাষ্ট্রপতির তালিকায় বিভিন্ন সেক্টরের অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে কে আসতে পারেন, এ বিষয়ে কাজ করছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি করা হবে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ মোট আসন ৩৫০টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মোট আসন ৩০২টি, জাতীয় পার্টির ২৬টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৪টি, জাসদের ২টি, গণফোরামের ২টি, বিকল্পধারার ২টি, তরিকত ফেডারেশনের ১টি ও জেপির ১টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন তিনজন। বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় এখন সংসদে দলটির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই বলে জানায় নির্বাচন কমিশন। সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় পরবর্তী রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ থেকে হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ৩৫ বছর, সর্বোচ্চ সীমা উল্লেখ নেই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। তবে তার সংসদ সদস্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তফসিল ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অবশ্য জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি আইন অনুসারে, ইসি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং যাচাই-বাছাই করবে মনোনয়নপত্র। প্রার্থী একজন হলে এবং যাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে ইসি। একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে ভোট হবে। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।

মানবকণ্ঠ/এআই