manobkantha

মিথুন-শিমুলস স্টোরি

সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক আর ইউটিউবে ইদানিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন কানাডা প্রবাসী এক বাংলাদেশী যুগল। ইমিগ্রেশন বা পুরোপুরি ফুড ব্লগিং নয় তারা করছেন লাইফস্টাইল ব্লগ্গিং পুরোটাই বাংলায়। তাদের ক্যামেরায় উঠে আসছে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রভিন্সের বাংলাদেশী কমুনিটির কথা, দেখা যাচ্ছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম নির্বাচিত শহর গুলোর অন্যতম বিখ্যাত শহর “ভ্যানকুভার” এর পাহাড় আর প্রশান্ত মহাসাগরের দৃশ্য, শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশী কানাডিয়ান সিটিজেন আর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জীবন গল্প, আর এই গল্প গুলোই প্রতি নিয়ত শুনিয়ে যাচ্ছেন "মিথুন-শিমুলস স্টোরি" (Mithun-Shimul’s Story)।

কথা হচ্ছিল কামরুল হাসান মিথুন আর রুমাইয়া আফরীন ওরফে শিমুলের সাথে, দুজনেই কানাডিয়ান সিটিজেন এখন, আর পেশায় দুজনেই কাজ করছেন কানাডিয়ান কেন্দ্রীয় সরকারের ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা হিসেবে। জানালেন দুইজনের জন্মই ঢাকায়, পরিচয় আর প্রণয় হয় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে। মিথুনের বাবা আলতাফ হোসাইন ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা আর শিমুলের বাবা এ কে কোরাইশীর হাত ধরে বাংলাদেশে হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক।

দুইজনের পরিবারই ঢাকায় সেটেল হওয়ায় দুইজনের কারোরই কখনোই বিদেশে সেটল হবার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। পড়াশোনা শেষে মিথুন কাজ শুরু করেন গ্রামীণফোনে এরপর চলে যান কর্পোরেট ব্যাংকিং সেক্টরে আর শিমুল যোগ দেন শিক্ষকতায় ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুলে। হঠাৎ করেই কানাডিয়ান পিআরের জন্য অ্যাপ্লাই করেন দুজন বিয়ের পর পরই, আর খুব দ্রুতই সফলও হন কিন্তু যাবেন কি যাবেন না সেই বিষয়ে দ্বিধা কাজ করছিল। অবশেষে দুজনই ২০১৫ সালে ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে উড়াল দেন কানাডায়।

মিথুন-শিমুল বলছিলেন, প্রথম কয়েক বছর তারা বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা সময় পার করেছেন, মিথুন কানাডায় উইনিপেগ এর একটি ব্যাংকে আর শিমুল একটি সরকারি স্কুলে দিনে কাজ করতেন, আর দুজনেই রাতে ইউনিভার্সিটি অফ উইনিপেগে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগদান করবার সুযোগ আসে, এরপরই তারা চলে আসেন কানাডার ভ্যানকুভার শহরে। গ্রেটার ভ্যানকুভারের বাংলাদেশী কম্যুনিটির বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন তারা। ছোটবেলা থেকেই মিথুন স্কুল, কলেজ ও পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করতেন আর শিমুল বাংলাদেশ বেতারের এনলিস্টেড শিশুশিল্পী ছিলেন। ভিডিও করা আর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি বিশেষ ঝোক ছিল মিথুনের। করোনাকালীন সময়ে শিমুলই প্রথম ইউটিউব চ্যানেলটি খোলেন, এখন অবশ্য দুইজনই কাজ, সামাজিকতা আর পরিবারকে সময় দেবার পর পুরোটা সময়ই দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের পছন্দ করে ফেলে দর্শকরা। কানাডিয়ান বাংলাদেশীদের জীবনের গল্প তাদের চোখ দিয়েই দেখতে শুরু করে দর্শকরা, আইনি জটিলতার কারণে ইমিগ্রেশনের বিষয়টিকে তারা এড়িয়ে যান সচেতনভাবে আর দর্শকদের যাদের কানাডা আর এর বাংলাদেশী কমুনিটির সম্পর্কে আগ্রহ আছে তাদের প্রায় প্রতিটা কনটেন্টতেই একটা মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করেন। দুইজনই বেশ সাবলীলভাবে তাদের জীবনের স্টোরি দেখিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কানাডা, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ, খাওয়া আর পসিটিভ জীবনযাপনের একটা আইকন হয়ে উঠেছেন তারা অনেক বাংলাদেশী তরুণ তরুণীর কাছে। প্রায় বছর খানের আগে খোলা তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে এখন সর্বমোট প্রায় চল্লিশ হাজারের ও বেশি ফলোয়ার রয়েছে যা বেড়েই চলেছে প্রতিদিন। সোশ্যাল মিডিয়ার হিসেবে অনুযায়ী তাদের কোনো কোনো ভিডিও প্রায় এক লক্ষবারের ও অধিক সময় দেখা হয়েছে, তাদের বেশ কয়েকটি কনটেন্ট দেখা হয়েছে আটশো হাজার ঘন্টা ধরে।

দুই এক বছর পর পরই পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব আর ফলোয়ারদের টানে বাংলাদেশে আসেন এই যুগল, এখন প্রায় মাসখানেকের ছুটিতে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন তারা। ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানালেন তারা, বন্ধুবৎসল আর প্রচন্ড সামাজিক এই যুগল কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে আরো মনোযোগী হতে চান। মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান কানাডিয়ান বাংলাদেশী লাইফস্টাইলের ধারনা। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে বাংলাদেশের শিক্ষিত আর অবস্থাপন্ন জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশ যারা কানাডায় যাচ্ছেন বা যাবেন, তাদের তথ্যের একটা উৎস আর চলার পথের একটা অনুপ্ররণা হয়ে থাকতে চায় মিথুন-শিমুল স্টোরি-বাংলাদেশী কানাডিয়ান যুগল!