manobkantha

ভোলায় বিলুপ্তির পথে খেজুর রস

ভোলায় বিলুপ্ত হতে বসেছে খেজুর রস। আগ্রহ থাকলেও আগের মতো খেজুর গাছ না থাকায় পাওয়া যাচ্ছে না স্বাদের খেজুর রস। এক সময় মানুষের বাড়িতে, সড়কের পাশে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যেত। শীতকাল আসতেই গাছ কেটে হাঁড়ি বসিয়ে ভোরে রস বিক্রি করত। এখন গাছ নেই বললেই চলে। যা আছে, সেগুলো থেকে আগের মতো রস পড়ে না। বুধবার জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।

বাপ্তা গ্রামের গাছি মো. শাজাহান বলেন, আগে পরিবেশ ভালো ছিল, প্রতিটি ফল মূলের গাছ ছিল ফুলে ফলে ভরা। এলাকার পরিবেশ দূষণের ফলে, ফলমূলের গাছে আগের মতো ফল ধরে না। আগে সকালে হাঁড়ি নামিয়ে রস নিয়ে যাওয়ার পরও গাছ থেকে ফোঁটা ফোঁটা রস ঝড়তে থাকত দুপুর পর্যন্ত। এখন রস ঝড়বে তো দূরের কথা সারা রাতে মাঝারি সাইজের হাড়িই ভরে না।

রস সংগ্রহকারী মো. আলমগীর শিয়ালী বলেন, ত্রিশ বছর ধরে আমি এ কাজ করছি।গত পাচঁ বছর আগেও গাছ থেকে দৈনিক রস সংগ্রহ হতো প্রায় ১০ থেকে ১২ কেজি। আর এখন সংগ্রহ হচ্ছে ২ থেকে ৩ কেজি। এ বছর ৫০টি গাছ ছুলেছি এতে যে রস পাই তা নিজে পরিশ্রম করে এবং গাছ মালিককে রস দিয়ে আমার পোষায় না। তাই চিন্তা করছি আগামীতে আর এ কাজ করব না।

গাছি মালেক বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন দূষণে গাছের শক্তি ও ভিটামিন কমে গেছে। আমার ৬টি গাছের পাশে গর্ত করে প্রতিদিন পানি দিয়ে গাছগুলো সবল রাখার চেষ্টা করছি। তার মতে আগে প্রচুর খেজুর গাছ ছিল এলাকায় কিন্তু পরিবেশ দূষণ ও গাছের মালিকরা গাছগুলো লাকড়ি হিসেবে বিক্রি করে দেয়ায় খেজুর গাছ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় প্রতি হাড়ি খেজুর রস বিক্রি হতো ২০ থেকে ৩০ টাকায়। বর্তমান সে খেজুরের রস ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। অনেক জায়গাতে এর বেশি টাকাও বিক্রি হচ্ছে। আগামী বৈশাখ মাস পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা যাবে।

ভোলা জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান ওয়ারিসুল কবির বলেন, খেজুরের রসের সঙ্গে বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি মিল রয়েছে। নানা কারণেই দিন দিন খেজুর গাছগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ফলে মানুষ এখন কষ্ট করে গাছে চড়ে রস সংগ্রহ করতে চাচ্ছে না। যদি প্রযুক্তি ব্যাবহার করে কষ্ট লাগব করা যেত তাহলে মানুষের এ কাজে আগ্রহ বেড়ে যেত। এখন এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে সরকারি বে-সরকারিভাবে খেজুর গাছ রোপণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এ জেলার মাটি খেজুর চাষের উপযোগি। উপজেলা পর্যায়ে গাছ বিতরণকালে খেজুর চারা প্রদানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাবো।