
যোগাযোগ ও সম্পর্ক
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৪৩

কান্তা রায়: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বন্ধু হয়, আত্মীয়স্বজনরাও সে তালিকায় থাকেন। কিন্তু সম্পর্কের যত্ন-আত্তির বিষয়টি যেন উবে যাচ্ছে। তাই নিজেকে এবার গুটিয়ে নেবার পালা এসেছে। অনেক দেখা অনেক কিছু শেখার পরে এ সিদ্ধান্তে যেতেই হবে। জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো এটাই- নামমাত্র সম্পর্কের জের টেনে মন চাইলেই যে কাউকে ব্যবহার করার প্রবণতা। এখন থেকে হিসাব উল্টো হলে ব্যাপারটা কেমন হবে? কেউ খোঁজ নিলে আমি খোঁজ নেব, না হলে নেবো না আমিও। কেউ সময় দিলে আমিও তাকে সময় দেবো, না দিলে তার ইচ্ছে মতো আমিও এভেইলএভেইল হবো না এতে যারা সম্পর্ক রাখার রাখবে, না রাখতে চাইলে রাখবে না, কোনো আফসোস নেই। কারো জন্যই কিছু থেমে থাকবে না। প্রকৃতি বদলে যায় আবহাওয়ার কারণে আর মানুষ প্রয়োজন ফুরালে। কিছু মানুষ আছে যারা কেবল নিঃস্বার্থভাবে প্রিয়জন বা পরিচিতজনদের জন্য মন উজাড় করে দিতে জানি অথচ দিনশেষে আমাদের ভাগ্যে জোটে অবহেলা, অপমান।
বেশ কিছু দিন আগে একদিন বন্ধু আবিরকে বললাম, দোস্ত আমার আজ মন খারাপ একটু গল্প করতে চাই সময় দিবি? সে মুখের ওপর না করলো না ঠিকই কিন্তু ঐ যে নানা বাহানার অজুহাত দিতে শুরু করলো। বুঝে নিলাম তার অজুহাতের ভাষা। কিছু না বলে চুপ করে ফোনটা কেটে দিলাম, রাখার আগে বললাম ভালো থাকিস। তারপর চাপা অভিমান নিয়ে আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করলাম। কারণ এই রকম ঘটনা একদিন নয়, প্রায়ই ঘটত। পুঁজির রাজ্যে বাণিজ্য মূল বিষয়। মানুষ, বন্ধু সম্পর্ক সেখানে গুরুত্বহীন। ফলে দিন যত যায় মানুষ নিজের অজান্তেই একা হয়ে যায়। তখন শৈশব-কৈশোর যৌবনের বন্ধুদের সঙ্গ আশা করলেও বিষয়টা লাভশূন্য হয়ে যায়।
বর্তমানের ইন্টারনেটের যুগে যেখানে পাশাপাশি বসে থেকেও আমরা কাছাকাছি আসতে পারি না, সেখানে ফোন দিয়ে বন্ধুকে ডাকলে চলে আসবে এমনটাও ভাবা আজকাল বোকামি মনে হয়। কিন্তু সেই বন্ধুটির যখন আপনাকে প্রয়োজন পড়বে দেখবেন আপনি দশহাত মাটির নিচে থাকলেও ঠিক খুঁজে বের করতে চাইবে। কারণ তারা জানে তাদের প্রয়োজনে বা বিপদে আপনি মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। কিন্তু যখন আপনার প্রয়োজন তখন কারো টিকির নাগাল আপনি পাবেন না।
এভাবে কতদিন? যে কোনো সম্পর্কেই পারস্পরিক বোঝাপড়াটা থাকা জরুরি, কে কম কে বেশি সেটা ম্যাটার করে না। একজনের জন্য আরেকজনের টানটাই যথেষ্ট কিন্তু আজকাল এসব কোথাও নেই। প্রয়োজন আছে তো তুমি আছো, প্রয়োজন শেষ তুমি কে হে ভাই দূরে গিয়ে মরো। স্বার্থের এই দুনিয়ায় তারাই অবহেলিত হয়, যারা বিনা স্বার্থে কিছু করে। এভাবে চলতে দিলে আজীবন একশ্রেণির মানুষ দিয়েই যাবে আরেক শ্রেণি কেবল নেবে বিনিময়ে ভালো ব্যবহারটুকুও ফেরত দেবে না। তাহলে কি দরকার বার বার নিজেকে টিস্যু পেপারে পরিণত করার? তারচে তাদের সাথেই এমন ব্যবহার করা হোক, যারা প্রয়োজনে খোঁজে। তাদের সাথেও সম্পর্কটা দেয়া-নেওয়ার হোক যারা কিনা কেবল নিতেই জানে।
সম্পর্ক যাই হোক, অন্যের প্রয়োজনে সাড়া দিতে গিয়ে নিজেকে কখনোই সহজলভ্য করতে নেই। কারণ তারা সহজের মূল্য দিতে জানে না। তাই তো সহজের কাছে আমি আরো সহজ, কঠিনের কাছে তারচেয়েও বেশি কঠিন। সম্পর্কগুলো এভাবেই চালনা করতে হয়। তাহলে দিনশেষে কেউ তাচ্ছিল্য করার সাহস অন্তত দেখাতে পারে না।
লেখক: সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
মানবকণ্ঠ/এআই