
সাইফুদ্দিন আহমেদের শিল্পের ভাষা
- ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:২৪

চিত্রশিল্পী সাইফুদ্দিন আহমেদের প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছিল গত ৪ ডিসেম্বর থেকে শেষ হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর। লালমাটিয়াস্থ ‘শিল্পাঙ্গন গ্যালারি’ তে ‘Dreams Ascendant’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত চিত্র প্রদর্শনীটি আপাত দৃষ্টিতে একক বলা হলেও এটা পাবলিকলি একক চিত্রপ্রদর্শনী। কারণ ইতোপূর্বে তার একাধিক প্রাইভেট চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিল্পী তার শিল্পের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে শুরু করেন নিজস্ব আবেগ, অনুভ‚তি, অভিজ্ঞতা ও নীতিগত অবস্থান থেকে। শিল্পী সাইফুদ্দিন আহমেদের কাজে তার প্রাতস্বিকতা আছে। অ্যাক্রেলিক, অ্যাচিং বা চাইনিজ কালির ব্যবহারে আঁকা তার ছবির ভাষাও আলাদা। তার ছবির মধ্যে নৈঃশব্দ আছে, সংগীতের রিদম আছে, তেজ আছে, ভাষা আছে। আছে নিজের মতো করে মোটিভ নির্মাণের বিষয়টি। তার প্রদর্শনীতে গ্যালারি হয়ে উঠেছিল প্রাণের মেলা।
সবাই দেখতে এসেছিল ভিণ্ণ ধারার ছবির একটি প্রদর্শনী। প্রচুর কাজ নিয়ে শিল্পী সাইফুদ্দিন আহমেদ শুরু করেছিলেন তার চিত্র প্রদর্শনী। শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে ছিল ছবির প্রাচুর্য। এক্রেলিক চাইনিজ কালি, এচিং সব কাজ ছিল থরে থরে সাজানো। প্রত্যেকটা শিল্পকর্ম শিল্পবোদ্ধাদের ভাবিয়েছে।
ছবির ভাষার সুনির্দিষ্ট কোনো বাক্য বিন্যাস না থাকলেও ছবির ভাষা সবাই যে যার মতো করে ভেবে নিতে পেরেছে। চিত্রকরের সাফল্য এটাই। আমরা যদি প্রাথমিকভাবে বুঝতে চাই ছবির ভাষা তাহলে প্রাথমিকভাবে মনে হবে বিমূর্ত চিত্রকলা। আরেকটু এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে রং ব্যবহারের নিজস্ব রীতির মাধ্যমে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মোটিভ। রঙ ও রেখার মধ্যে লুকায়িত ছবির ভাষা। এক এক জন ছবির সামনে গিয়ে এক এক ধরনের ব্যাখ্যা দিতে পারছিলেন। যার সবটাই সঠিক। অর্থাৎ ছবির টেকচার নির্মানের বহুমাত্রিকতা এখানে লক্ষ্যনীয়। এক্সিবিশনের প্রতিটি ছবির ভাষা নিহিত ছিল তার রঙ ও রেখায়। ড্রয়িংয়ের ফর্ম বা রূপ শৈলীর বিন্যাসে তার প্রকাশবৈচিত্র্য নিহিত।
ছবির টেক্সচার বিনির্মাণ এবং আলোছায়ার খেলা ছিল, তবে ছবির রং ব্যবহারের মুন্সীয়ানা ছিল লক্ষনীয়। কোনো কোনো ছবি নৈঃশব্দ্যের সবার দৃষ্টি কেড়েছে। ছবিতে যা নেই তাও যেন উঠে এসেছে বলা অবলার দ্বন্দে বা দ্বৈরথে। কবিতা-গল্প-গানের মতো ছবিও মানুষের মনকে কেন্দ্রে ধারণ করে-মানুষের মনকে বাইরে রেখে ছবি যে তৈরি হয় এটা সাইফুদ্দিন আহমেদের তুলিতে প্রতিভাত হয়েছে। শিল্পীর আবেগ-অনুভ‚তি এবং তার বিন্যাসী জগতের পুরোটা না এলেও দার্শনিক জায়গাটা তিনি ধরে রেখেছেন। কত সহজে কত সংক্ষেপে বড় কাজ করা যায়, অবলা অযুত কথা বলা যায় এটাই ছিল সাইফুদ্দিন আহমেদের চিত্রকলার বিশেষত্ব। ফর্ম ভেঙে ফর্ম তৈরি হয়েছে। যে কারণে ছবি পেয়েছে বহুমাত্রিকতা।
সাইফুদ্দিন আহমেদের ফর্ম, চেনা ফর্মের বাইরে। তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে বের না হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক হতেও চাননি। ফলে মুক্ত হাতে একেছেন জীবনের স্বরলিপি। ফলে তার আঁকার ধারাটি হয়ে উঠেছে প্রাতস্বিক। সবার বাইরে নিজের মতো। শিল্পীর অভিজ্ঞতা, দেখার চোখ ও চিত্রকলার সম্ভাব্য সীমানা উপলব্ধির প্রশ্নে তার সৃজনশীল প্রকাশ ব্যতিক্রমী। সচেতন দৃষ্টি, চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কিত উপলব্ধি তার শিল্পকর্মের মূল পুঁজি। মানুষের হৃদয়ের গহীনের অনুভ‚তিকে বোঝার মানবিক প্রবণতা তার ক্যানভাসে রঙে-রেখায় যেভাবে ছবি হয়ে উঠেছে তা বেশ চিত্তাকর্ষক। তার অনেক ছবি দেখলে শুরুতে বিমূর্ত মনে হলেও কাছ থেকে দেখলে মনে হয় ফিগার আছে, দৃশ্য আছে। রঙ ব্যবহারের মুন্সীয়ানা তার একদম আলাদা। যে কেউ তার অংকনশৈলী দেখে মুগ্ধ হবেন। প্রতিটা মানুষের জীবনের ব্যাখ্যা, সৌন্দর্য সৃষ্টিও কৌশল একদম আলাদা। সবই তার জীবনের অন্তর্গত কতা-যা বলা হয়নি কোনদিন। সেগুলোই ফুটে উঠেছে-রঙে রেখায়। ব্যতিক্রমী এ আযোজন মুগ্ধ করেছে শিল্পকলার মানুষদের। শিল্পেও ভাষা হয়ে উঠেছে সবার অব্যক্ত কথামালা-শিল্পীর স্বার্থকতা এখানেই।
মানবকণ্ঠ/এআই