
মঙ্গলকোট বাজারসংলগ্ন ব্রিজ
৭১ এর গণহত্যা- অনলাইন ডেস্ক
- ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৫২

এ সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। যুদ্ধের সময় তিন লাখ মা বোন হারিয়েছে তাদের সম্ভ্রম। হানাদারদের সহযোগী আল বদর-আল শামস, রাজাকাররা হানাদারদের সন্তুষ্টির জন্যে আমাদের মা-বোনদের ধরে নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিয়ে আসতো।
পাশবিক নির্যাতনের পর তাদেরকে হত্যা করে বেওয়ারিশভাবে ফেলে দেয়া হতো। সারা বাংলাকে যারা গণহত্যার উন্মুক্ত প্রান্তরে ভাসিয়েছিলো তাদের সবার বিচার এখনো হয়নি। বরং তাদের আদর্শে আরেকটি প্রজন্ম উঠে দাঁড়াচ্ছে। তারা জঙ্গিবাদের নামে বিভিন্ন অপকাণ্ড করে চলেছে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী যাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। এখনো রক্তের দাগ শুকায়নি।
দেশের বিভিন্ন স্থান আছে যেখানে সংঘটিত হয়েছে এক একটি গণহত্যা। সেসব হত্যাকাণ্ডের নাটের গুরুরা এখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর সঙ্গে আত্মীয়তা করে এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। রাজাকার স্বাধীনতাবিরোধীদের আর রাজাকার বলা যায় না।
১৯৭৫ সালে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে পরিবার পরিজনসহ হত্যার পরে স্বাধীনতারিরোধীরা সমাজে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, এদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। অথচ সারাদেশে ছড়িয়ে আছে মুক্তিকামী মানুষকে নির্বিচারে হত্যার সব স্থান, বিভিন্ন কাহিনী।
যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের ওপর মঙ্গলকোট বাজারসংলগ্ন একটি ব্রিজ, যা যশোরের সাথে সাতক্ষীরা এবং খুলনা জেলার সংযোগ ব্রিজ। বর্তমানে ব্রিজটি রাজাকারের ব্রিজ নামে পরিচিত। যুদ্ধকালীন কেশবপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ক্যাম্প থেকে দেশ প্রেমিকদের চোখ-মুখ বেঁধে রাতের আঁধারে নিয়ে যাওয়া হতো এই ব্রিজে। ব্রিজের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে পা ধরে উল্টে নিচে ভদ্রা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। কথিত আছে এখানে প্রায় অর্ধশত দেশপ্রেমিককে হত্যা করা হয়েছে।
এই স্থানটিকে স্বাধীনতার স্মৃতি হিসাবে ধরে রাখতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয় ‘যুদ্ধজয়’ নামে স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এখানে বিজয়ের দিন মোমবাতি জ্বালিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। নদীসংলগ্ন হওয়ায় কালের আবর্তে নদী ভাঙনের সাথে সাথে স্তম্ভটি আজ হুমকির সম্মুখীন। যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী জানান, আগামী প্রজন্মের স্বার্থে স্তম্ভটি রক্ষা করা প্রয়োজন। পরবর্তী প্রজন্ম যাতে সঠিক ইতিহাস উপলব্ধি করতে পারে সেজন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভদ্রা নদী খননের ফলে স্তম্ভটি ধসে পড়ার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
স্মৃতি স্তম্ভটি যাতে মুখথুবড়ে না পড়ে সে জন্যে এলাকাবাসী প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। স্তম্ভটি জরুরিভিত্তিতে রক্ষা করা প্রয়োজন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মানবকণ্ঠ/এআই