অগ্নিপরীক্ষায় আর্জেন্টিনা

হারলেই বিশ্বকাপ শেষ আর্জেন্টিনার। ড্র করলে সমীকরণের জালে আর জিতলে সোজা নক আউট পর্বে। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনা এমন অবস্থানেই আছে। জয়ের কোনো বিকল্প নেই। মেসি যেহেতু বলেছে চমক দেখাবে আর্জেন্টিনা, হতাশ করবে না; তাহলে তো বিশ্বাস রাখা যেতেই পারে মেসির উপর। পোল্যান্ডও ছাড় দেবে না কারণ কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ-সি ডেথ গ্রুপে পরিণত হয়েছে। গ্রুপের কেউ কাউকে ছাড় দেবে না একচুল।

বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায় মাঠে নামবে আজেন্টিনা-পোল্যান্ড। ম্যাচটি ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’ অনুষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচ জিতে নক আউট পর্বের পাশাপাশি গ্রুপের শীর্ষস্থানটাও নিশ্চিত হবে লিওনেল স্কালোনির দলের। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা এই মুহূর্তে সৌদি আরবের সঙ্গে সমান তিন পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পোল্যান্ডের থেকে ১ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনা।

বুধবারের ম্যাচটিতে জয়ী হতে পারলে পোল্যান্ড গ্রুপ-সি’র শীর্ষ দল হিসেবেই পরের রাউন্ডে যাবে। তবে পরের ম্যাচে সৌদি আরব যদি মেক্সিকোকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয় তবে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ড্র করলেই চলবে পোলিশদের। সৌদি আরব যদি তিন পয়েন্ট অর্জন করে এবং তারা যদি আর্জেন্টিনার কাছে হেরে যায় তবে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হবে। সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে হেরে হতবাক হয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনা চারদিন পরেই মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারিয়ে আবারও লড়াইয়ে ফিরে আসে। দলের সুপারস্টার লিওনেল মেসির গোলে ৬৪ মিনিটে ডেডলক ভাঙে আর্জেন্টিনা। এরপর এনজো ফার্নান্দেজের বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে ব্যবধান দ্বিগুণ হবার পাশাপাশি স্বস্তির জয় নিশ্চিত হয়। ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইন ড্রেসিং রুমে আনন্দ উল্লাসের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

বিশ্বকাপের শুরুতে ফেভারিটের তকমা লাগিয়ে কাতারে খেলতে এসে প্রথম ম্যাচেই ছোট দল সৌদি আরবের কাছে হেরে সমর্থকদের হতাশ করা দলটি এখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই মাঠে নামবে মেসি, ডি-মারিয়ারা। 

সৌদি আরবের বিরুদ্ধে গত শনিবার ২-০ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচটিতে লেভা গোল পেয়েছেন। এর আগে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে পেনাল্টিতে গোল মিস করেছিলেন বার্সেলোনার এই স্ট্রাইকার। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে অঘটনের জš§ দেয়া সৌদি আরবের সঙ্গে খেলতে নেমে পোল্যান্ড শুরু থেকেই তাই বেশ সতর্ক ছিল। পিওটর জিয়েলিনস্কির গোলে প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়া পোল্যান্ডকে ৮২ দ্বিতীয় গোল উপহার দেন লিওয়ানদোস্কি। আর এতেই পোল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়। গোলের পর লেভাকে বেশ আবেগী দেখা যায়।

ম্যাচ শেষে বার্সার এই তারকা স্ট্রাইকার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ আসরে এতদিনে তার স্বপ্নপূরণ হয়েছে। কিন্তু এখনো তার এবং তার সতীর্থদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়নি। ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মতো পোল্যান্ড গ্রæপ পর্ব পেরিয়ে শেষ ১৬-তে যাবার লক্ষ্য নিয়েই কাতারে খেলতে এসেছে।’

কাতারে এ পর্যন্ত খেলা দুই ম্যাচে প্রথম দল হিসেবে এখনো কোনো গোল হজম করেনি পোল্যান্ড। এতে তাদের রক্ষণভাগের শক্তিমত্তা প্রমাণিত হয়। শেষ চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে পোল্যান্ড কোনো গোল হজম করেনি। ঐদিন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কিছুটা হলেও কঠিন। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে আগের ১১ বারের মোকাবিলায় প্রতিটি ম্যাচেই গোল হজম করতে হয়েছে পোল্যান্ডকে। সর্বশেষ ২০১১ সালে প্রীতি ম্যাচে লা আলবেসেলেস্তেদের বিপক্ষে অবশ্য তারা ২-১ গোলের জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল।

গ্রæপ-সি’র দ্বিতীয় দল হিসেবে পরের রাউন্ডে যাওয়া এড়াতে হলে পোল্যান্ডকে হারানো ছাড়া উপায় নেই। এই গ্রæপের দ্বিতীয় দলটিকে শেষ ১৬’তে ফ্রান্সের মোকাবিলা করতে হবে। চার বছর আগে এই ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে পরাজিত হয়ে শেষ ১৬ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। শেষ ১৩টি বিশ্বকাপের ১২টিতেই নক আউট পর্বে খেলা আর্জেন্টিনা ইউরোপীয়ান কোনো দলের বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচেই পরাজিত হয়েছে। দুটোই ছিল ২০১৮ বিশ্বকাপে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে গ্রুপ পর্বে ৩-০ গোলে পরাজয়ের পর শেষ ১৬’তে তারা ফ্রান্সের কাছে পরাজিত হয়।

সৌদি আরব যদি মেক্সিকোকে হারাতে ব্যর্থ হয় তবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করলেই হয়তো স্কালোনির দলের শেষ ১৬ নিশ্চিত হবে। পোলিশ বস সিজিসল মিচিনিউইজ অপরিবর্তিত দল নিয়েই মাঠে নামার আশা করছেন। আক্রমণ ভাগে লিওয়ানদোস্কির সঙ্গে যথারীতি থাকবেন আরকাদিয়াজ মিলিক। গোলরক্ষক ওজিচে সিজিসনি সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে পেনাল্টি রুখে দিয়ে নিজেকে আরও একবার বড় আসরে প্রমাণ করেছেন।

প্রথম দুই ম্যাচ রক্ষণভাগ সামলানো ম্যাচটি ক্যাশ, কামিল গিলিক, জ্যাকুব কিভির ও বারটোজ বেরেসিজিনস্কির উপর ভরসা করা হচ্ছে। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে শততম ম্যাচ থেকে মাত্র চার ম্যাচ দূরে থাকা অভিজ্ঞ গ্রিজর্জ কিলিচোভিয়াকের সঙ্গে বার্মিংহ্যামের ক্রিস্টিয়ান বিয়েলিক থাকবেন।

এদিকে আর্জেন্টিনার লাইন-আপ নিয়ে স্কালোনিকে আরও একবার ভাবতে হচ্ছে। বিশেষ করে রক্ষণভাগ ও মধ্যমাঠে পরিবর্তনের আভাস রয়েছে। লিসান্দ্রো মার্টিনেজ সেন্টার-ব্যাকে তার জায়গা ফিরে পেতে পারেন। তার সঙ্গে নিকোলাস ওটামেন্ডিতো রয়েছেনই। গঞ্জালো মনটিয়েল, নাহুয়েল মোলিনা ও হুয়ান ফয়েথ রাইট-ব্যাক পজিশন নিয়ে লড়াইয়ে আছে। লেফট-ব্যাকে থাকবেন নিকোলাস টাগলিয়াফিকো ও মার্কোস অ্যাকুনার মধ্যে যেকোনো একজন। প্রথম দুই ম্যাচে বদলী বেঞ্চে থাকা ফার্নান্দেজ প্রথমবারের মতো মূল একাদশে সুযোগ পেতে পারেন। আক্রমণে যথারীতি লটারো মার্টিনেজ, অ্যাঞ্জেল ডি-মারিয়া ও মেসিই থাকছেন। আরও একবার জুলিয়ান আলভারেজ ও পাওলো দিবালাকে বদলী বেঞ্চে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

মানবকণ্ঠ/এআই