Image description

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে চুরি বেড়েছে ম্যানহোলের ঢাকনার। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। চুরি ঠেকাতে পুলিশে বারবার আবেদন করেও প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ সিটি করপোরেশনের। আর পুলিশের দাবি তারা কোন অভিযোগই পাননি।

প্রাচীন পৌরসভা ভেঙে ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল গঠিত হয় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ণে রাস্তাঘাট, ড্রেন, ফুটপাত এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার বরাদ্দ দেয় ১৫৭৫ কোটি টাকা। সেই অনুযায়ী নগরীতে চলমান রয়েছে উন্নয়ন। রাস্তা সংস্কার করার পাশাপাশি নতুন ভাবে তৈরি হচ্ছে ফুটপাত। এর মাঝে রয়েছে ম্যানহোল। তবে এসব ম্যানহোলের ঢাকনা হচ্ছে অহরহ চুরি। সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে প্রতিদিন গড়ে ৫-৭টি করে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হচ্ছে। এতে রাস্তা ও ফুটপাত ব্যবহার করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্ঘটনারোধে খোলা ঢাকনায় লাঠিতে লাল কাপড় বেঁধে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে দেখা যায়। এর আগে ২০২৩ সালে তিন মাসে সিটি করপোরেশনে ৮০ লাখ টাকার ঢাকনা চুরি হয়েছিল।

নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আসমা আক্তার বলেন, কয়েকদিন আগেও আমাদের বাসার সামনের রাস্তার মধ্যে ঢাকনাসহ ম্যানহোল ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দেখি ম্যানহোলের ঢাকনা গায়েব। তাড়াহুড়া করে এলাকার লোকজন সেখানে একটি লাঠিতে লাল কাপড় বেঁধে দিয়েছে। না হয় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আলিয়া মাদ্রাসা এলাকার বাসিন্দামোহাম্মদ আলী বাবুল বলেন, সবচেয়ে বেশি ঢাকনা চুর বলাশপুর এবং ভাটিকাশর এলাকায়। এই এলাকার ম্যানহোলের ঢাকনা থাকে না বললেই চলে। ঝড় বৃষ্টির দিন নেশাখোররা বেশি ঢাকনা চুরি করে। অনেক সময় এসব চুর ধরা হলেও জামিনে বের হয়ে পুনরায় সেই কাজটি করে। এসব ঢাকনা চুরেরা ভাঙারির দোকানে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে।

বলাশপুরের বাসিন্দা লাইলী আক্তার বলেন, ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে ফুটপাত দিয়ে হাটতে ছিলাম। হঠাৎ করে পা পিছলে গর্তে পড়ে যায়। কারণ ম্যানহোলের ঢাকনা নেই। আমি ব্যাথা পেয়েছি তাতে দুঃখ নেই কিন্তু আমার সন্তানও পড়ে আঘাত পেতে পারত। ঢাকনা যেন চুরি না হয় সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনকে টেকসই উদ্যোগ নিতে হবে।

সমাজ রুপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, চুরি হচ্ছে বাঙালির অভ্যাস। অনেক ছিঁচকে চোর আছে তারা ঢাকনা চুরির টাকায় নেশা কিনে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি করে মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে যারা ফেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ হলে দ্বিতীয়বার আর চুরির ঘটনা ঘটত না। এতে সিটি করপোরেশন ও পুলিশের দায় রয়েছে।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল হক বলেন, প্রতিদিন গড়ে সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে ৫-৭টি করে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হচ্ছে। যার মূল্য প্রকার বেঁধে ৮ হাজার ৫ শ, ১৬ হাজার ৬৭৫ এবং ২৫ হাজার টাকা। এই তিন ধরণের ঢাকনা লাগানো হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে সেগুলো অর্ডার দিয়ে বানিয়ে আনতে হয়। ঢাকনার ওপরে সিটি করপোরেশনের নাম ও সন উল্লেখ থাকে। ঢাকনাগুলোর মান ভালো থাকায় রোদ বৃষ্টিতে ভিজলেও জং ধরে না। চোরেরা রাতবিরাতে অটোরিকশা নিয়ে শাবল দিয়ে বলপ্রয়োগ করে ভেঙে নিয়ে যায়। সাধারণ মানুষও প্রতিবাদ করে না। বেশ কয়েকবার পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়েছিল রাতের টহল জোরদার করার জন্য। কিন্তু পুলিশ তা করেনি। যার কারণে ঢাকনা চুরি কমছে না। চুরি ঠেকাতে কংক্রিটের ঢাকনার দিকে ধাবিত হচ্ছি।
 
ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, আমি কোতোয়ালী থানায় যোগদান করেছি এক মাসও হয়নি। এরমধ্যে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির কোন অভিযোগ পায়নি। তবে ঢাকনা চুরি ঠেকাতে ভাঙারী দোকানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।