Image description

দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ১০ নং ধোপাছড়ি ইউনিয়নটি নদী, পাহাড় ও সমতলের সংমিশ্রণ হওয়ায় পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই ইউনিয়নে যুগ যুগ ধরে একসাথে বসবাস করে আসছে বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন। সড়ক যোগাযোগের অপ্রতুলতায় ইউনিয়নটি পিছিয়ে রয়েছে।

ধোপাছড়ি ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ধোপাছড়ি খালের জলধারা এই ইউনিয়নের মানুষকে দুইভাগে বিভক্ত করে রেখেছে যুগের পর যুগ। পাহাড় থেকে সৃষ্টি হয়ে খালটি মিশেছে খরস্রোতা শঙ্খ নদীর সাথে। খালটি দিয়ে প্রতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের পানি তীব্র গতিতে প্রবেশ করে শঙ্খ নদীতে। বাঁশের সাঁকোতেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে খালটি পারাপার করতে হতো ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ১ নং ও ২ নং ওয়ার্ড শঙ্খকুল, চেমিরমুখ এলাকার প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবারসহ দুই পাড়ের সহস্রাধিক মানুষকে।

স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ধোপাছড়ি খালের ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ হয়নি। এই খালে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে অনেকবার সমীক্ষাও হয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে স্থায়ী সেতু নির্মাণ হয়নি।

সর্বশেষ বিগত ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ থেকে ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ১০০ মিটার লম্বা ও ৭ ফুট প্রস্থের একটি দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। তখন থেকেই সেতুটি দিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপারসহ মোটর সাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, টমটমসহ ছোট ছোট যানবাহন অবাধে চলাচল করেছে।

খালের ওপর স্থায়ীভাবে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য অনেক আবেদন-নিবেদনের পর পাকা সেতু নির্মাণ করা না হলেও কাঠের সেতুতেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুশি হয়েছিল ধোপাছড়ির বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা সেতুটিকে ধোপাছড়িবাসীর পদ্মা সেতু হিসেবে আখ্যায়িত করতো। কিন্তু ধোপাছড়িবাসীর দুঃখ যেন শেষ হবার নয়। গত ২০ মে অবিরাম বর্ষণে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে স্বপ্নের সেতুটির মধ্যখান বরাবর ভেঙে যায়। এতে আবারো সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শঙ্খকুল ও চেমিরমুখ এলাকার বাসিন্দারা। সেতু ভেঙে যাওয়ার পর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এটি মেরামত না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় খাল পারাপার হচ্ছেন স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী সহ স্থানীয় জনসাধারণ।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পাহাড়ি ঢলের সাথে ভেসে আসা একটি বিশাল বাঁশের চালির ধাক্কায় সেতুর একাংশ ভেঙে পড়েছিল। তখন মেরামত করে পুনরায় সেতুটি সচল করা হয়েছিলো।

এবিষয়ে ধোপাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লতিফা আক্তার বলেন, কাঠের সেতুটি ভেঙে পড়ার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। ইউনিয়ন পরিষদের ফান্ডে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় এটা মেরামত করতে পারছি না।

চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মো. রাজিব হোসেন বলেন, ধোপাছড়ি খালের উপর নির্মিত কাঠের সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর এটি মেরামতের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এর সাথে কথা বলেছি। নতুন অর্থ বছরে বরাদ্দ পেলে এটি মেরামত করা হবে। যেহেতু খালটিতে পানির তীব্র স্রোত বহমান সেহেতু বর্ষা মৌসুমে এটি মেরামত করা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। পানি কমলে এটি মেরামত করে চলাচল উপযোগী করা হবে। আপাতত আগের মতো নৌকায় মানুষ পারাপারের ব্যবস্থা করা হবে। স্থায়ী সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডির পর মন্ত্রণালয় থেকে বড় অনুদান পেলে উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দেয়া যায় কিনা তা দেখবেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

ধোপাছড়ি খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বান্দরবান সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ধোপাছড়ি ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার একটি ইউনিয়ন হলেও ধোপাছড়ি খালের ওই অংশটি বান্দরবান সড়ক বিভাগের আওতাধীন হওয়ায় চট্টগ্রাম জোনের সেতু প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। ধোপাছড়ি খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর একনেকে পাস হলে দরপত্র আহবান করে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।