বগুড়া-৫: হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধারে তৎপর বিএনপি, একক প্রার্থীতে খুশি জামায়াত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে নির্বাচনি হাওয়া বইলেও এখনো পার্থী চুড়ান্ত হয়নি তরুণ দল এনসিপির। অথচ অন্যান্য দলের নেতারা দামিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী উপজেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দবিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির বাবা-ছেলেসহ সম্ভাব্য ৭ প্রার্থী গণসংযোগের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা ও সেবামূলক বৃক্ষরোপণ, অসহায়দের সহায়তা, শিক্ষার্থী ও কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ করে ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন।
জানা যায়, বগুড়া জেলার এই আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলার সংসদীয় সাতটি আসনের মধ্যে দুটি ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পাঁচটি আসন হাতছাড়ার মাধ্যমে বিএনপির দুর্গ নড়বড়ে হয়ে যায়। নির্বাচনে জয়ী হয়ে দলের হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধারে এখন ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। দলের সাত প্রার্থীর সবাই বলছেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবেন ধানের শীষ মার্কার বিজয় নিশ্চিত করতে একজোট হয়ে কাজ করবেন।
এ আসনে এবার বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কে এম মাহবুবার রহমান হারেজ, জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা জানে আলম খোকা, পৌর বিএনপির সভাপতি স্বাধীন কুমার কুন্ডু, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, জেলা বিএনপির সদস্য আসিফ সিরাজ রব্বানী, ধুনট উপজেলা বিএনপির সভাপতি একেএম তৌহিদুল আলম মামুন।
বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থীরা আলাদা আলাদাভাবে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে গণসংযোগের পাশাপাশি তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটে চলছেন এবং ভোটারদের দোয়াও চাচ্ছেন। জনগণের মন জয় করতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা- করে যাচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে জামায়াত ইসলাম এখানে দলীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা দবিবুর রহমানকে একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। তিনি ঈদুল আজহার আগে ও পরে নিয়মিত এলাকায় দলীয় কর্মসূচির বাইরেও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছনে। এ ছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় নিজস্ব দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণায় থেমে নেই ইসলামী আন্দোলন শেরপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মীর মাহমুদুর রহমান চুন্নুও। তিনিও নির্বাচনের মাঠ দাপিযে বেড়াচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন অন্য সব নেতাদের মতোই।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, এই মুহূর্তে, শেরপুর-ধুনটের জনগণ শুধু উন্নয়ন নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার মতো সাহসী নেতৃত্ব খুঁজছে। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, আমি সর্বাগ্রে যে কাজটি গুরুত্ব দেব, তা হলো দলে ও দেশে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চার বিকাশ ঘটানো।
তিনি বলেন, শেরপুর-ধুনটের মানুষের অধিকার রক্ষায় আমি অতীতেও সাহসের সঙ্গে কথা বলেছি, আমার লক্ষ্য একটি সৎ, সুশাসিত, সচল প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে মানুষ ভয়ে নয়, অধিকার নিয়ে বাঁচবে।
কে এম মাহবুবার রহমান হারেজ বলেন, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের প্রকৃত সেবা নিশ্চিত করতে চাই। গ্রাম থেকে শহরে সব নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে চাই। তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেরপুর-ধুনটের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি শেরপুরবাসীর প্রাণের দাবি গ্যাস ও ফ্লাইওভার নিশ্চিত করতে কাজ করতে চাই।
উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক জানে আলম খোকা বলেন, ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারও যদি দল আমার ওপর আস্থা রেখে দলীয় মনোনয়ন দেন তাহলে শেরপুর-ধুনট আসনে জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করব। টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি শেরপুর উপজেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে চাই।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আসিফ সিরাজ রব্বানী বলেন, প্রথম কাজ হবে এলাকার প্রতিটি মানুষের নাগরিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দীর্ঘদিনের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থা আমাদের প্রতিটি নাগরিককে প্রজায় পরিণত করেছে। আমি বিশ্বাস করি আবারও যদি সেই মানবিক মর্যাদা নিয়ে সম্মিলিতভাবে আমরা দাঁড়াতে পারি, তাহলে যেকোনো কঠিন লক্ষ্য অর্জন করতে আমরা সক্ষম হব। কাজটা কঠিন তবে অসম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমি চাই, ধুনট-শেরপুরে তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভর করে তুলতে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়ন প্রত্যাশী মীর মাহমুদুর রহমান চুন্নু বলেন, তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি শেরপুর-ধুনটের প্রতিটি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তবে ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পাটি জাতীয় পার্টির এ আসনে কোনো তৎপরতা নেই। তারা এখনো নির্বাচনের জন্য জনগনের কাছে যাননি।
Comments