Image description

সুনামগঞ্জের ছাতকে ১৩ বছরের কিশোর কামিল আলীকে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা মাত্র আড়াই লাখ টাকায় ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের ফলে কামিলের দুটি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাকে কল্পিত চুরির মামলায় ফাঁসানো হয়। আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু হলেও অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে, যা ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।

জানা যায়, ছাতক উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে কামিল সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আকিলপুর গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী রমিজ আলীর দোকানে কাজ করত। রমিজ ও তার ছেলেরা সবজি ব্যবসার আড়ালে মাদক পরিবহন করতেন, যা কামিল জানতে পেরে চাকরি ছাড়েন। কিন্তু রমিজ তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে পুনরায় কাজে ফিরিয়ে নেন। কামিল মাদক ব্যবসার কথা ফাঁস করে দেওয়ায় গত ৩০ জুন রমিজ ও তার ছেলেরা তাকে শারীরিক নির্যাতন করে এবং একটি ভবনের তৃতীয় তলা থেকে ফেলে দেয়। এতে কামিল গুরুতর আহত হন। পরে রমিজ তার ছেলে মোস্তাকীমকে বাদী করে কামিলের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় মিথ্যা চুরির মামলা (জিআর ১৮৯/২৫, ধারা ৩৮০) দায়ের করেন, যেখানে কামিলের বয়স ২০ বছর দেখানো হয়।

পুলিশ কামিলের বয়স ও শারীরিক অবস্থা যাচাই না করে তাকে থানা হাজতে রাখে এবং পরে আদালতে পাঠায়। ১ জুলাই জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ কামিলকে জামিন দেন এবং তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। তিনি সুনামগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপারকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

তদন্ত শুরু হতেই রমিজ প্রভাবশালীদের সহায়তায় মীমাংসার চেষ্টা করেন। গত ১৮ জুলাই ছাতক বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান আমরুসহ মধ্যস্থতাকারীরা মামলা তুলে নেওয়ার শর্তে কামিলের বাবাকে আড়াই লাখ টাকা দেন। তবে মধ্যস্থতাকারীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

এ বিষয়ে ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশে রোববার (৬ জুলাই) এএসপি সার্কেল থানায় এসে তদন্ত করে গেছেন। টাকার বিনিময়ে নিষ্পত্তির বিষয়টি আমার জানা নাই।

একই বক্তব্য দিয়ে তদন্তকারী পুলিশ সুপার (দিরাই সার্কেল) মো. শরিফুল হক বলেন, আগামী ১৫ কার্য দিবসের ভেতরে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ রয়েছে।