Image description

ব্রহ্মপুত্র নদে একটি বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সেন্ট্রাল কমিটির পলিটিক্যাল ব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য লি, মেইনলিং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধের স্থানে আয়োজিত এক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন। সিনহুয়া বার্তা সংস্থা এই খবর জানিয়েছে।

এই প্রকল্পে পাঁচটি ক্যাসকেড (ভাটিতে একের পর এক) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, যার জন্য আনুমানিক ১ লাখ ২ হাজার কোটি ইউয়ান (প্রায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করা হবে। প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে চীনের অন্যান্য প্রদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে, তবে সিজাংয়ের স্থানীয় বিদ্যুতের চাহিদাও মেটাবে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে চায়না ইয়াজিয়াং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে, যা এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে।

ব্রহ্মপুত্র নদে চীনের এই ধরনের বৃহৎ প্রকল্প বরাবরই নিম্ন অববাহিকার দেশ, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ। পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, উজানে বাঁধ নির্মাণ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন ব্রহ্মপুত্রের প্রাকৃতিক প্রবাহে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এর ফলে নিম্ন এলাকায় জলপ্রবাহ কমে যাওয়া, শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব, এবং বর্ষা মৌসুমে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অতীতেও ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর চীনের প্রকল্পের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং চীনের সাথে তথ্য বিনিময়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। বাংলাদেশও এই নদীর জলপ্রবাহের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় এই ধরনের প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে চিন্তিত। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো নদীর বাস্তুতন্ত্র, কৃষি এবং জনজীবনের ওপর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিকভাবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও সহযোগিতার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। ব্রহ্মপুত্র একটি আন্তঃসীমান্ত নদী হওয়ায়, এর জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় যেকোনো বড় পরিবর্তনের আগে আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা এবং তথ্য আদান-প্রদান অত্যন্ত জরুরি। এই প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং তার ফলাফল প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভাগ করে নেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।