
বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে সহায়তা করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ একটি বিশেষ মিশন চালু করেছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রেস উইং জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এই মিশন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আইনি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার-সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা পূরণে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আদর্শিক অবস্থান নিয়ে সমাজের একটি অংশের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে, OHCHR মিশন বিশেষভাবে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও প্রতিকারের পাশাপাশি পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর মনোযোগ দেবে। মিশনটি দেশের প্রতিষ্ঠিত আইনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে কোনো সামাজিক এজেন্ডাকে উৎসাহিত করবে না বলে জানানো হয়েছে।
প্রেস উইং আশা করছে, এই মিশন সর্বদা স্বচ্ছতা বজায় রাখবে এবং স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বাস্তবতার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে, বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যদি এই অংশীদারিত্ব কখনো জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আর সামঞ্জস্যপূর্ণ না মনে হয়, তাহলে সরকার এই চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করার সার্বভৌম ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিগত সরকারের সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গণহত্যার মতো দায়মুক্তির ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময়ে যদি এমন একটি সংস্থা সক্রিয় থাকত, তাহলে হয়তো অপরাধগুলোর সঠিক তদন্ত, লিপিবদ্ধকরণ এবং বিচার করা যেত। বর্তমান সরকারের মতে, মানবাধিকারের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি আদর্শের ওপর নয়, বরং ন্যায়বিচারের ওপর ভিত্তি করে। সরকার এই অংশীদারিত্বকে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার এবং নাগরিকদের সুরক্ষা বাড়ানোর একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে, যা আইনের মাধ্যমে গঠিত ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হবে এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR) এবং বাংলাদেশ সরকার তিন বছর মেয়াদী একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে। এই মিশনের মূল লক্ষ্য হলো দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সংগঠনগুলোকে মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া।
Comments