Image description

গোপালগঞ্জে সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রকাশ্যে গুলি চালানোর সিদ্ধান্তকে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। এই ঘটনায় পাঁচজনের প্রাণহানি এবং অসংখ্য মানুষের আহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটি আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড লঙ্ঘনের প্রশ্ন তুলেছে।

এইচআরএফবির বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, জনসমক্ষে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত শুধু অমানবিকই নয়, এটি বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সরাসরি লঙ্ঘন। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী ব্যবহার সবার মৌলিক অধিকার। কিন্তু এই ঘটনায় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার এই অধিকারকে সরাসরি আঘাত করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগ কোনো অজুহাত বা পরিস্থিতিতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এটি রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতার স্পষ্ট অভাবের বহিঃপ্রকাশ। মানবাধিকার সংগঠনটি জোর দিয়ে বলেছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, কিন্তু এক্ষেত্রে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা পরিস্থিতিকে আরও জটিল এবং প্রাণঘাতী করে তুলেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যরা জনতার দিকে গুলি ছুড়ছেন। যদিও পুলিশের মহাপরিদর্শক দাবি করেছেন গোপালগঞ্জে পুলিশ কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করেনি, এবং আইএসপিআর ‘আত্মরক্ষার্থে’ বলপ্রয়োগের কথা বললেও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি। এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ঘটনার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে এবং মানবাধিকার সংগঠনটিকে আরও বেশি উদ্বিগ্ন করেছে।

এইচআরএফবি এই ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া এবং রাজনৈতিক সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার অন্তর্নিহিত কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মানবাধিকার কর্মীদের মতে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই বলপ্রয়োগের মাত্রা সীমিত এবং আনুপাতিক হওয়া উচিত। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কেবল তখনই অনুমোদিত, যখন অন্য কোনো উপায়ে গুরুতর জীবনহানি ঠেকানো সম্ভব না হয়। গোপালগঞ্জের ঘটনায় এই নীতিগুলি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।