বুড়িগঙ্গার তীর ছুঁয়ে গড়ে ওঠা সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রথম নগরী পুরান ঢাকা যার রূপ ও ঐতিহ্য নিয়ে শত শত বছরের উপন্যাস লিখতে হতো অথচ বর্তমান তার চেহারা অযত্নে অবহেলায় বিবর্ণ। কিন্তু কেন হলো এমন! অব্যবস্থাপনায় মৃত্যুর মুখে প্রায় পুরান ঢাকা! ঢাকা মহানগরীর আদি অঞ্চলটিকে বলা হয় পুরান ঢাকা। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাধারণ বাঙালি সংস্কৃতি থেকে এখানকার সংস্কৃতি অনেকটাই ভিন্নতর। পুরান ঢাকা পূর্ব-পশ্চিমে গেন্ডারিয়া, ফরিদাবাদ থেকে হাজারীবাগ ট্যানারি মোড় পর্যন্ত এবং দক্ষিণে ঢাকা সদরঘাট থেকে নবাবপুর পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, পুরান ঢাকা একসময় অত্যন্ত সুপরিকল্পিত, সুন্দর ও ছিমছাম শহর ছিল। মুঘল শাসকদের পতনের পর পুরান ঢাকা তার সৌন্দর্য হারিয়েছে। ব্রিটিশ শাসকরা-এ শহরের কিছু দেখভাল করলেও বর্তমান সময়ের প্রশাসনযন্ত্রের অবহেলায় পুরান ঢাকা ধীরে ধীরে তার শ্রী হারিয়ে ফেলছে। পুরান ঢাকার সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় বাহন হলো রিকশা। এই প্রাচীন শহরটির যাতায়াতের পথগুলো অত্যন্ত সরু হওয়াতে রিকশা এখানকার প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘সীমিত আকারে এখনো ঘোড়ার গাড়ি দেখা যায়।
পুরান ঢাকা বাংলাদেশের কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশের সব ঐতিহ্যবাহী স্থান, ঐতিহাসিক ঘটনা পুরান ঢাকা থেকেই শুরু। অথচ পুরান ঢাকার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। পুরান ঢাকার রাস্তাঘাটের দিকে তাকালে বুঝা যায় কতটা নাজুক অবস্থা। এখন রাস্তার এখানে-সেখানে ভাঙা, পানি জমা, ময়লা আবর্জনায় ভরপুর। নেই কোনো সংস্কারের ব্যবস্থা রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে এর থেকে গ্রাম অঞ্চলের মেঠোপথের রাস্তা অনেক ভালো। অল্প বৃষ্টিতে হাঁটুপানি বেঁধে যায়। যানজট, দুর্গন্ধ একাকার অবস্থা। সেখানে ঢাকা শহর বলতেই পুরান ঢাকাকে বোঝে সবাই। হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য পুরান ঢাকার সাথে জড়িয়ে আছে।
সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব পুরান ঢাকার সংস্কার করা। রাস্তাঘাট মেরামত করা। ড্রেন পরিষ্কার করা, অলিগলিতে যত ভাঙা খারাপ রাস্তা আছে সব যতদ্রুত সম্ভব মেরামত করা। লক্ষ্মীবাজার, বাবুবাজার, শাখারীবাজার, কলতাবাজার, নাজীরাবাজার, সদরঘাটসহ পুরান ঢাকার যতস্থান আছে কোনো বিদেশির কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি করতে এই সকল এলাকার রাস্তাঘাট, পরিবেশ যথেষ্ট। বাংলাদেশ সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য প্রতিনিয়ত অনেক বিদেশি এই দেশে আসে। এবং সবার আগে তারা বাংলাদেশের কেন্দ্রবিন্দু এই পুরান ঢাকাতেই আসে। সুতরাং সরকারের উচিত পুরান ঢাকা-র ঐতিহ্য রক্ষা করা।
পুরান ঢাকার ফরিদাবাদ, গেন্ডারিয়া, পোস্তগোলা জুরাইন, দয়াগঞ্জ, সূত্রাপুর, নারিন্দা এলাকার রাস্তাঘাটের খুব বাজে অবস্থা। ভাঙা রাস্তাঘাটের সংস্কারের কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না। রাস্তাঘাটে যেখানে-সেখানে বিরাট গর্তের সৃষ্টি হওয়ার ফলে ঝাঁকুনি সহ্য করতে হচ্ছে যাত্রীদের। পুরান ঢাকার বেশির ভাগ রাস্তায় গর্ত থাকায় রিকশা ও অন্যান্য যানবাহনে চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে। আশা করি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পুরান ঢাকার রাস্তাঘাট সংস্কার জরুরিভাবে সম্পন্ন করবে। পুরান ঢাকা ঘুরে দেখলে দেখা যায়, প্রায় সব গলি বা লেনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। ড্রেনে ময়লা জমে আছে। ড্রেন খোলা।
বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা খুবই বাজে, অধিকাংশ গলির ড্রেনে জমে আছে বর্জ্য। শুধু পুরান ঢাকার গলি নয়, খোদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেনেজ ব্যবস্থাও ভীষণ খারাপ। ড্রেনের মুখখোলা যা দুর্গন্ধ ছড়ায়। সঠিক পদক্ষেপ ও সঠিক পদ্ধতিতে ঢাকার দক্ষিণ অংশ তথা পুরান ঢাকার সব সমস্যা দূর করে, পুরান ঢাকাকে আধুনিক ঢাকায় রূপান্তর করে তা পূর্বের ঐতিহ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। ঢাকা মহানগরের বৈষম্য দূর করে পুরান ঢাকাকে নতুন ঢাকায় পরিণত করতে হবে। পুরান ঢাকাকেও দৃষ্টিনন্দন করতে হবে। সরকারের দায়িত্বশীল পদক্ষেপ ও জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এগিয়ে আসুক, পুরান ঢাকা ফিরে পাক তার ঐতিহ্যের জীবন।
লেখক: শিক্ষার্থী
Comments