মানুষের স্বাস্থ্যের নিরিখে নিউরোপ্লাসটিসিটির খানিকটা বিচার-বিশ্লেষণের পর, বিজ্ঞানের অনুসন্ধিৎসা নিয়ে তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে নরম্যান ডয়েজের বাণীর সত্যতা গভীরভাবে বোঝা যায়, সন্দেহ নেই। মস্তিস্ক-যা কিনা মানুষের দৈহিক ও মানসিক কার্যকারিতা এবং চিন্তাভাবনার নির্ণায়ক অতি-শক্তি, তাকেই কত তুচ্ছতাচ্ছিল্যের চোখে দেখেছিলেন প্রাচীন পৃথিবীর পাশ্চাত্য চিন্তাবিদরা। আর সে ধারণা সম্যকভাবে পাল্টাতে লেগে গেল চারশো বছর!
স্বনামখ্যাত প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল কিছুতেই মস্তিষ্ককে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দিতে রাজি হননি। ‘ছোট-খাটো কয়েকটা প্রয়োজনীয়তা মেটায় মস্তিষ্ক, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, উত্তপ্ত রক্তকে ঠাণ্ডা করে। রক্ত যখন বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায়, তখনই আমাদের চোখে নিদ্রা নেমে আসে। মস্তিষ্ক তখন সেই রক্তকে ঠাণ্ডা করে। এর বাইরে চিন্তা প্রক্রিয়ার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই, স্পষ্টভাষায় তার ছাত্রদের এই শিক্ষাই দিয়েছিলেন অ্যারিস্টটল।
কিন্তু পৃথিবীর ‘প্রথম শারীরবিদ’ (অহধঃড়সরংঃ) হেরোফিলাস (খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৩৩৫-২৮০) প্রথম স্বীকার করেন, ‘চিন্তা এবং প্রতিভার রসদ হিসাবে মস্তিষ্কের অবদান অনস্বীকার্য’। মহান দার্শনিক সক্রেটিসও কিন্তু বলেছিলেন, ‘শরীর বিদ্যার প্রশিক্ষকরা যেমন শরীরের পেশির ওপর ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে শেখান, মানুষ তেমনি নিজের মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষিত করতে পারে।’
ফারসি চিন্তাবিদ ও দার্শনিক রেনে দেকার্ত-ই প্রথম জোরগলায় মস্তিষ্কের গুরুত্ব, কার্যক্ষমতার নিরিখে বিচার করে একে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে তৎপর হলেন। তিনিই বললেন, ‘মস্তিষ্ক একটি চমৎকার যন্ত্রবিশেষ, এবং শরীরের সবচেয়ে জটিল যন্ত্র।’ মস্তিষ্ককে যন্ত্র ভাবার সেই শুরু। পরবর্তীকালে ড. নরম্যাস ডয়েজ তার দ্য ব্রেন দ্যাট চেঞ্জেস ইটসেল্ফ গ্রন্থে মস্তিষ্ককে যন্ত্র ভাবার প্রাচীন অভ্যাসের উল্লেখ করেছেন-‘প্রথমত, মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়া কোনো রোগী পুরোপুরিভাবে সেরে উঠতে পারেন না; দ্বিতীয়ত, জীবস্ত মস্তিষ্কে অনবরত ঘটে চলা আণুবীক্ষণিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া-গুলোর নাগাল আমাদের বিজ্ঞানের দৃষ্টি এখনও পায়নি; তৃতীয়ত, পুরনো দিনের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের প্রথম যুগ আমাদের এটাই ভাবতে শিখিয়েছে এবং চমৎকারভাবে ভাবতে বাধ্যও করেছে। তাই আমরা সবাই ভেবে যাচ্ছি, মস্তিষ্ক একটি অত্যন্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র। ফলে তার বদল কিংবা বাড়বৃদ্ধি কিছুই হয় না। এরপরে কম্পিউটার যখন এসে পড়ল, তখন তো অচিরেই মস্তিষ্ককে চালিয়ে দেয়া হলো হার্ডওয়্যার নামে।’ ১৯৬০ দশকের পর থেকে মস্তিষ্ক নিয়ে নতুন করে আবার চিন্তাভাবনা শুরু হলো। ড. ডয়েজও নিউরোপ্লাসটিসিটির তত্ত্বের শুরুতে সে-কথাই বলেছেন-‘সত্তরের দশকের গোড়ায় যখন প্রথম শুনি, আমার শিরায় যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়। শুরু করি অন্বেষণ। গবেষণাগার থেকে বেরিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে এক্ষেত্রে বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলি। দেখলাম, অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু আবিষ্কার ইতোমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। দেখা গেল, মস্তিষ্ক সত্যিই তার আকারে পরিবর্তন ঘটায়, তার নির্দিষ্ট কিছু কাজকর্ম আরও বেশি সুষ্ঠু করে তোলে এমনকি তার কোনো অংশ কাজে অক্ষম হয়ে পড়লে, আরেকটা অংশ অনেক সময় সে দায়িত্ব কাঁদে নিয়ে নেয়। বিজ্ঞানের কাছে এ ঘটনা একদম নতুন। মস্তিষ্কের এই বৈশিষ্ট্যকেই বলা হচ্ছে নিউরোপ্লাসটিসিটি।’ নরম্যান ডয়েজ একে বলেছেন ‘নিউরোপ্লাসটিসিটি বিপ্লব’। বলেছেন, ‘আমরা যেদিন প্রথম ছবির সাহায্যে মস্তিষ্কের মূল গঠনে আলোকপাত করেছিলাম ও তার গঠনগত মূল উপাদান নিউরন সামনে এসেছিল, সেদিনের পর থেকে নিয়ে আজ-এই সুদীর্ঘ সময়কালের মধ্যে সবচেয়ে তোলপাড় তোলা সত্য হলো নিউরোপ্লাসটিসিটি, যা মস্তিষ্ক বিজ্ঞানের অনেক চেনা ছকই এলোমেলো করে দেবে।’ আরও বলেছেনÑ সম্পর্ক, সংস্কৃতি, ব্যবহার, প্রযুক্তি, সংযুক্তি, নেশা, শিক্ষা, সমাজ ও পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ের প্রভাবেই আমাদের মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হতে থাকে, কালক্রমে এই পরিবর্তন বদলে দেয় আমাদের জীবনটাই। এখানে আরও একটা কথা উল্লেখ্যÑ প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্কের গঠন ভিন্ন। অতএব তার প্রভাবেও তফাৎ আছে। নরম্যান ডয়েজের অন্বেষণ ও পরীক্ষালব্ধ সমস্ত তথ্যই যত্ন করে সাজানো আছে ‘দ্য ব্রেন দ্যাট চেঞ্জেস ইটসেল্ফ’ গ্রন্থে। এক্ষেত্রে তিনি অবশ্য আশা করছেন, নিরোপ্লাসটিসিটির মতোই এই বইটিও অচিরেই সারা পৃথিবীতে জোয়ার আনবে। বলা বাহুল্য যে লেখকের সে আশা অক্ষরে অক্ষরে তো প্রমাণিত হয়েছে ইতোমধ্যেই।
নিউরোপ্লাসটিসিটি বিপ্লবকে বুঝতে গেলে ড. ডয়েজের মতোই ফিরে যেতে হবে ষাটের দশকে। ওই দশকের শেষদিকে সাইকোবায়োলজিস্ট রজার ডব্লু স্পেরি এক যুগান্তকারী গবেষণায় লক্ষ্য করেন, মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তাধারার দুটি ভিন্ন দিক রয়েছে। একটি প্রথমে পূর্ণ ছবি দেখে তারপর তা থেকে বিশদ তত্ত্ব গ্রহণের নামে। দ্বিতীয়টি প্রথমেই কোনো খবর বিশ্লেষণাত্মকভাবে বিচার ও ব্যাখ্যা করে, খুব ছোট ছোট অংশজুড়ে পূর্ণ ছবি তৈরি করে। প্রথমটিকে তিনি বলেছেন দক্ষিণ মস্তিষ্ক, দ্বিতীয়টিকে বলেছেন বাম মস্তিষ্ক। এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৮১ সালে স্পেরি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীকালে গবেষণার কাজ আরও বিস্তার লাভ করে। প্রমাণিত হয়, এমনিতে মস্তিষ্ক অখণ্ড হিসেবেই প্রতিভাত। কিন্তু মস্তিষ্কের যে অংশটি যুক্তিগ্রাহ্য ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে, অর্থাৎ সেরিব্রাণ কটেক্স, তার আবার দুটি অংশ। তবে এই দুটি অংশই অসংখ্য স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা সংযুক্ত, যে তন্ত্রগুলোর মধ্যে দিয়ে ‘বার্তা’ আদান-প্রদান হয়। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, এই দুটি অংশের ডানও আরেকটি বাম মস্তিষ্ক নামে অভিহিত। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ডান মস্তিষ্ক-বাম মস্তিষ্ক না বলে এগুলোকে একেকটি হেমিস্ফয়ার করাই যুক্তিযুক্ত। হ্যাঁ, এখানে জেনে রাখা ভালো, আমাদের ডান হেমিস্ফিয়ার শরীরের বাম অংশকে ও বাম হেমিস্ফিয়ার শরীরের ডান অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে। সে যাই হোক, মস্তিষ্কের ডান ও বাম অংশের কাজগুলোরও নির্দিষ্ট কিছু ভাগ রয়েছে। যেমন, বাম অংশের কাজ-যুক্তি ব্যবহার করা, বিশদ সম্পর্কে অন্বেষণ, তথ্যনির্ভরতা, ভাষা ও শব্দের জ্ঞান, অতীত ও বর্তমান সম্বন্ধে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও অঙ্কে দক্ষতা, সারসংক্ষিপ্ত করতে পারা, জ্ঞান আহরণ, বাস্তবনির্ভরতা, কৌশল প্রণয়ন ইত্যাদি। ডান অংশের কাজ-অনুভূতিনির্ভর, কল্পনা করা, সংকেত ও ছবি থেকে তত্ত্ব আহরণ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ, দর্শন এবং আধ্যাত্ত্বিকতা সম্পর্কে সমক্য জ্ঞান, বিশ্বাস, ঝুঁকি নেয়া ইত্যাদি। অর্থাৎ সহজ কথায় বলতে গেলে, মস্তিষ্কের বাম অংশ শারীরবৃত্তীয় কাজ ও ডান অংশ মনোনির্ভর বা অন্তর্জগতের চাবিকাঠি। নিউরোপ্লাসটিসিটির মূল তত্ত্ব আবর্তিত মস্তিষ্কের এই দুটি অংশকে ভিত্তি করে। নিউরোসাইকিয়াট্টিস্ট জেফরি স্কোয়ার্টজ ও বিখ্যাত বিজ্ঞান-সাংবাদিক শ্যারন বেগলের লেখা দ্য মাইন্ড দ্য ব্রেন: নিউরোপ্লাসটিসিটি অ্যান্ড দ্য পাওয়ার অব মেন্টাল ফোর্স বইতে বলা হয়েছে, যখন আমরা কোনো নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করি, তৎক্ষণাৎ তা মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক পরিকাঠামোকে প্রভাবিত করে। অভিজ্ঞতা ছোট হলে সে প্রভাব ক্ষণস্থায়ী, বড় হলে সে প্রভাব গভীর। এর থেকেই শুরু হয় পরিবর্তন, যাকে এককথায় নিউরোপ্লাসটিসিটি বলে। এখানে আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, এই পরিবর্তনের পেছনে মস্তিষ্কের দুটি অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধন মূল ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের পরা ও অপরা অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধনের পোশাকি নাম নিউরোপ্লাসটিসিটি। ড. নরম্যান ডয়েজের সমান্তরাল পথে সিবিএস নিউজ ও টাইম ম্যাগাজিন একযোগে নিউরোপ্লাসটিসিটি তত্ত্বানুসন্ধানের কাজ আরম্ভ করেছে। এখন অবধি পাওয়া অনুসন্ধানলব্ধ তথ্যকে তারা পাঁচটি ভাগে ভাগ করে ‘দ্য কমপ্লিকেটেড অ্যান্ড মেসমারাইজিং ওয়ার্ল্ড অব ব্রেন’ নামের সিরিজে প্রকাশিত করেছে। সেখানে বিভিন্ন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও চিসিৎসক নিউরোপ্লাসটিসিটি সম্পর্কে উপরোক্ত সমস্ত তথ্যাদির সঙ্গে সঙ্গে ‘বয়সের ভারে ন্যুব্জ দেহের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়’ যুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছেন। সেইসঙ্গে তারা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবদান ও শারীরিক-মানসিক কিছু নির্দিষ্ট অনুশীলনের ফলে মস্তিষ্কের এই বৈশিষ্ট্যের ক্রমবর্ধমানতার কথাও মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন। নরম্যান ডয়েজ তার বইয়ে বলেছেন- ‘নিউরোপ্লাসটিসিটির খোঁজে আমরা সফরের সময়ে আমি এমন বিজ্ঞানীকে দেখেছি, যিনি জš§ান্ধ ব্যক্তির চোখে আলো ফুটিয়েছেন, জš§বধির ব্যক্তির শ্রবণক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়েছেন এই নিউরোপ্লাসটিসি-র সাহায্যে। মানসিকভাবে স্থবির ব্যক্তিরও মেধার উন্নতি ঘটাতে দেখেছি, দেখেছি আশি-ঊর্ধ্ব বয়সের মানুষের স্মৃতিশক্তিকে তরতাজা ও তীক্ষè করে তুলতে। এর ফলে তাদের জীবনধারাই বদলে গিয়েছে।
ড. নরম্যান ডয়েজের দ্য ব্রেন দ্যাট চেঞ্জেস ইটসেল্ফ পৃথিবীতে যত আলোড়ন তুলেছে, তার চেয়ে কোনো অংশে কম অবদান ছিল না রিচার্ড ডেভিডসনের। টাইম ম্যাগাজিন তাকে ২০০৬ সালের বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে উল্লেখও করেছে। আর এর মূলে আছে তার অভাবনীয় এক গবেষণা। মস্তিষ্কের পরা ও অপরা অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধনের পথ ও মস্তিষ্কের উপর তার প্রভাব, এককথায় নিউরোপ্লাসটিসিটির মূল তত্ত্বের এমন হাতে-কলমে গবেষণা আর কেউ করে দেখাতে পারেননি। অবশ্য একটি কথা প্রণিধানযোগ্য, সে-সময় নিউরোপ্লাসটিসিটি তত্ত্বের এত জনপ্রিয়তা হয়নি। আবেগ-অনুভূতির স্নায়ুবিজ্ঞান নিউরোসায়েন্স অব ইমোশন নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন বিশিষ্ট স্নায়ুবিজ্ঞানী রিচার্ড ডেভিডসন। ১৯৯২ সালে তার সেই গবেষণালব্ধ সত্যকে পুরোপুরি মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না বিজ্ঞানীসমাজ। তবে দলাই লামা তার কথা শুনে তাকে হাতেনাতে পরীক্ষার কাজ চালানোর জন্য ভারতের ধর্মশালায় আমন্ত্রণ জানান। ধর্মশালায় অবস্থিত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আটটি দলে ভাগ করে ফেলা হয়, সঙ্গে যোগ দেন দশজন স্বেচ্ছাসেবীও। স্বেচ্ছাসেবীদের ডেভিডসনের গবেষণাগারে ধ্যান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। এবার পরীক্ষা আরম্ভের পালা। প্রাণের টানে, ভালোবাসায় ভরপুর হয়ে ধ্যানে বসতে বলা হয়েছিল সবাইকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সন্নাস নেয়ার পর থেকেই সব মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার ঘণ্টা ধ্যান করেছেন। আর স্বেচ্ছাসেবীরা মাত্র এক সপ্তাহ। দেখা গেল, ধ্যান শুরুর ঠিক পরপরই সবার মস্তিষ্ক থেকে অতি শক্তিশালী গামারশ্মির বিচ্ছুরণ শুরু হলো। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই স্বেচ্ছাসেবীদের মাস্তিষ্ক থেকে পুরোপুরি তা মিলিয়ে গেল। কিন্তু ধ্যান শেষ হলেও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মস্তিষ্ক থেকে গামারশ্মির নির্গমন বন্ধ হলো না, তাদের মস্তিষ্কও অনেক স্ফীত আকার ধারণ করেছে ইতোমধ্যেই। গবেষণাগারে যন্ত্রপাতির দ্বারা ডেভিডসন এসব প্রমাণও করে দিয়েছেন। ২০০৪ সালের নভেম্বরে প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস-এর জার্নালে রিচার্ড ডেভিডসনের এই গবেষণা প্রকাশিত হয়। একেই আপাতত নিউরোপ্লাসটিসিটি-র প্রথম হাতেকলমে সফল পরীক্ষা বলে বিশ্ব স্বীকার করে নিয়েছে। মস্তিষ্কের সজীবতা, স্থিতিস্থাপকতা, সূক্ষ্মতা, স্বয়ংক্রিয়তা ও অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যÑ ভিজে কাদার তালের মতো নমনীয়তাÑ এ সবই বিশেষভাবে প্রকাশিত হয়। ঠিক এখান থেকেই নিউরোপ্লাসটিসিটির ব্যাটনটা হাতে তুলে নিলেন ড. নরম্যান ডয়েজ। চারশো বছরের জড়ত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে মস্তিষ্ক পূর্ণ উদ্যমে ফের সেই বেদান্তনির্দিষ্ট সত্য অভিমুখে। একাগ্রতা, নিষ্ঠা, মনোঃসংযম, ধ্যানশীলতার সাহায্যে অনন্ত শক্তিকে স্পর্শের চেষ্টা এছাড়া নিউরোপ্লাসটিসিটি বিপ্লবের আর কোনো পথ নেই যে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মানবকণ্ঠ/এসআরএস
Comments