Skip to main content

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের জীবনাদর্শ 

মো. জিল্লুর রহমান,
Image description

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল আরবের মক্কায় মা আমিনার কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পূর্বেই তিনি পিতা আবদুল্লাহ এবং মাত্র ছয় বছর বয়সে মাকে হারান। তিনি খুব ছোট সময় থেকেই আলআমিন বা সত্যবাদী বলে সকলের কাছে স্বীকৃত হন। এ কারণে তিনি খুব অল্প বয়সে কাবাঘর পুনঃনির্মাণের সময় হাজরে আসওয়াদ (পবিত্র কালো পাথর) স্থাপন করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তিনি নবীদের সর্দার, কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষ ও জিনের জন্য শ্রেষ্ঠ নবী এবং তিনিই সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। তাঁর সম্মান ও মর্যাদার সাক্ষ্য পবিত্র কোরানসহ সব আসমানি গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁকে সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তাঁর সময়ে আরব জাহান ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। তারা মারামারি আর হানাহানিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করত। এ যুগকে বলা হয় ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’। এ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে, তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-কে এ পৃথিবীতে পাঠান।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) সব মুসলমানদের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। বিশ্বের সর্বকালের সেরা মহামানব হিসেবে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্নাতীতভাবে স্বীকৃত। ইন্টারনেট জায়ান্ট ‘গুগল’ ডটকমের র‌্যাঙ্কিংয়েও বিশ্বসেরা মানুষ হিসেবে তালিকায় প্রথম স্থানেই তার নাম রয়েছে। গুগলে best man, best human, best human in the world,  Ôwho is the best man in the world- ইত্যাদি  লিখে সার্চ করলে প্রথমেই চলে আসে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর নাম। বিখ্যাত লেখক মাইকেল হার্টসের লেখা ‘বিশ্ব সেরা ১০০ মনীষী’ গ্রন্থে প্রথম স্থানেই রয়েছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত ওই বইটি তখন বিভিন্ন মহলে ব্যাপক হইচই ফেলে দেয়। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা। তাঁর এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য; বিবদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা।

তরুণ বয়সেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) সত্য ও সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে শান্তিকামী যুবকদের নিয়ে ‘হিলফুল ফুযুল’ অর্থাৎ শান্তিসংঘ গঠন করে আরব সমাজে হৈচৈ ফেলে দেন। হিলফুল ফুযুলের উদ্দেশ্য ছিল, আর্তমানবতার সেবা করা, অত্যাচারীকে প্রতিরোধ করা, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা, গোত্রে গোত্রে সম্প্রীতি বজায় রাখা ইত্যাদি।  কোরানে তাঁকে ‘রাহমাতুল লিল আ’লামীন’ বা জগতবাসীর জন্য ‘রহমত’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইসলামের আগে আরব সমাজে নারীর মর্যাদাপূর্ণ কোনো অবস্থান ছিল না। তাদের গণ্য করা হতো ভোগের বস্তু হিসেবে। নারী ছিল রাতের কবিতার আসর আর মদের আড্ডার বিশেষ অনুষঙ্গ। জীবন ও সমাজে তাদের বড় জোর স্বামী বা মনিবের মনোরঞ্জনের উপকরণের বেশি কিছু মনে করা হতো না। নারীকে পরিবার, সমাজ ও বংশের জন্য অসম্মান ও অভিশাপ মনে করা হতো।মহান আল্লাহ দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী ও পূর্ণতা দানের জন্য মহানবী (সা.)কে প্রেরণ করেছিলেন। যখন দ্বীন ইসলাম বিজয় ও পূর্ণতা লাভ করে তখন তিনি তাঁর বিদায়ের কথা অনুভব করেন। দশম হিজরিতে লক্ষাধিক সাহাবির সামনে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ বিকেলে আরাফাতের ময়দানে যে বক্তব্য পেশ করেন তা ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আগত, বিগত পৃথিবীর সব ভাষণের মধ্যে এ ভাষণ শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় বিভূষিত। বিশ্ব মানবতার মুক্তির এমন কোনো দিক নেই, যার ছোঁয়া এই মূল্যবান ভাষণে লাগেনি। মূলত বিদায় হজের ভাষণ মহানবী (সা.)এর ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনের কর্মপন্থা ও প্রজ্ঞার নির্যাস। আর তখনই কোরানের শেষ আয়াতটি নাজিল হয়, ‘আজকের এই দিনে তোমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম। ইসলামকেই তোমাদের ওপর দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ বিশ্বনবী জীবন সায়াহ্নের আগে দিয়ে গেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ, যা ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। এ ভাষণের পর তিন মাস তিনি এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে অবিনশ্বর জগতে পাড়ি জমান। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার ৬৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি আজ নেই কিন্তু তিনি ছিলেন সর্বশেষ নবী, সর্বকালের সেরা মানব। তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন দু’টি মূল্যবান জিনিস। একটি হলো সর্বকালের সেরা কিতাব আল কোরান আর অপরটি হলো তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ সুন্নাহ। বলা হয়েছে এই দু’টিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলে মানুষ কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। আসলে তাঁর জীবন ও কর্মই তাঁকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের স্বীকৃতি দিয়েছে।

লেখক: ব্যাংকার ও কলামিস্ট

মানবকণ্ঠ/এসআরএস

 


Comments