Image description

বাংলাদেশে গত ১০ মাসে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটেছে এবং রাষ্ট্র এখন এক ধরনের দলীয় প্রতিশোধের ছায়া শাসনে চলছে। এমন সময় পুলিশ কেন নীরব দর্শক— এমন প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক ও টকশো উপস্থাপক জিল্লুর রহমান।

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যেমন - আইনের শাসন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সাংবিধানিক স্থিতিশীলতা তা বাস্তবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। 

জিল্লুর রহমান সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার ওপর প্রকাশ্যে ‘জুতার মালা পরিয়ে, চর থাপ্পড় ও ডিম নিক্ষেপ’ এর ঘটনা তুলে ধরে বলেন, এটা শুধুই একজন ব্যক্তির উপর হামলা নয়, বরং এটি বিচার ব্যবস্থা, নাগরিক অধিকার এবং আইনের শাসনের উপর সরাসরি আঘাত।

তিনি বলেন, নুরুল হুদা অন্যায় করেছেন, অধিকার খর্ব করেছেন তবে এক অন্যায়কে আরেক অন্যায় দিয়ে মোকাবেলা করাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাহলে পরিবর্তনের জায়গাটা কোথায়? দেশে যদি আইন ও বিচার ব্যবস্থা থেকেই থাকে, আমরা কেন তা প্রয়োগ করছি না?

ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করাকে ‘নীরব দর্শকের ভূমিকা’ আখ্যা দিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন ‘এই যদি হয় গণতন্ত্র, তবে আমাদের গন্তব্য কোথায়?’

জিল্লুর রহমান আরো বলেন, দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও ‘মব সংস্কৃতি’ এখন নিয়মিত চিত্র হয়ে উঠেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১০ মাসে ‘মব হামলায়’ প্রাণ হারিয়েছেন ১৭৯ জন। এর মধ্যে ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই নিহত হয়েছেন ৮৩ জন, অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে ১৩-১৪ জন।

এই সহিংসতার পেছনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবকে দায়ী করে তিনি বলেন, মবের ভিডিও, চেহারা, পরিচয় সবই আছে। কিন্তু নেই গ্রেপ্তার, নেই অভিযোগপত্র, বিচার তো বহু দূরের কথা। পুলিশ বরাবরের মতো বলছে, তদন্ত চলছে, সংখ্যায় কম ছিলাম কিংবা ফোর্স ছিল না।

জিল্লুর রহমান আরো বলেন, বিচার ব্যবস্থায় ‘নিজেই বিচার করো’ মানসিকতা গেঁথে দিচ্ছে।

আজ নয় তো কাল, আমিই হব মবের টার্গেট এই ভয় সমাজের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও ক্ষমতাধরদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে।
বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে ‘মব সংস্কৃতি’ আরো বাড়ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এক পক্ষ বলছে সরকার ব্যর্থ, আরেক পক্ষ বলছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সাধারণ মানুষের চোখে দু’পক্ষই দায়ী।