
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণের পেছনে মূলত ধনী মানুষদের সীমাহীন ভোগবিলাস দায়ী হলেও পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাবে ভুগতে হয় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে, যাদের অধিকাংশ বাসিন্দাই দরিদ্র। বিশ্বের মাত্র এক শতাংশ জনসংখ্যা অর্থাৎ পৌনে ৮ কোটি মানুষ ৬৬ শতাংশ গরিব জনগোষ্ঠী অর্থাৎ প্রায় ৫০০ কোটি মানুষের চেয়েও বেশি কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী।
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান অক্সফাম ও স্টকহোম এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউটের যৌথ এক গবেষণায় সোমবার (২০ নভেম্বর) এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু বৈষম্য নিয়ে পরিচালিত এই সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়েছিল, তার ১৬ শতাংশই করেছিল ধনীরা। বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের বেশি এমন সব বিলিয়নিয়ার ও মিলিয়নিয়ার মিলিয়ে এই সংখ্যা ৭ কোটি ৭০ লাখ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হওয়ার কারণে বিশ্বে তাপজনিত যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তার নেতিবাচক প্রভাবে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে এই ১ শতাংশ মানুষ বসবাস করেন এমন এক পরিবেশে, যেখানে তাদের উপরে কার্বন নিঃসরণের প্রভাব খুব একটা পড়ে না। কিন্তু তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র , উড়োজাহাজ, প্রমোদ তরী বা অন্যান্য যেসব উপায়ে জীবনযাপন করে থাকেন, তার ফলে তারা প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬০০ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করে। ২০১৯ সালেও তারা এই পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের জন্য দায়ী ছিলেন।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়েছে, প্রতি ১০ লাখ টন কার্বনের কারণে বিশ্বে অন্তত ২২৬ জন নিম্ন আয়ের মানুষ মারা যায়। এই সংখ্যা বের করা হয়েছে ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির ব্যবহৃত একটি ‘মরটালিটি কস্ট ফর্মুলা’ ব্যবহার করে। বিশ্বের এক শতাংশ ধনী মানুষ যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে, তার জন্য আগামী কয়েক দশকে তাপজনিত সমস্যায় ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশ্বের এই এক শতাংশ অতি-ধনীর আয়ের ওপর যদি ৬০ শতাংশ আয়কর আরোপ করা হয় তাহলে যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর যে পরিমাণ কার্বণ নিঃসরণ হয় সে পরিমাণ নিঃসরণ গোটা বিশ্বে কমে যাবে। পাশাপাশি তাদের ওপর আরোপিত কর থেকে আসবে ৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিবর্তে বিশ্বকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে এগিয়ে নেয়া যাবে।
মানবকণ্ঠ/এসএ
Comments