Image description

যার গানে ভদ্র ছেলেটিও খানিক সময়ের জন্য পরিণত হয় দুষ্টু ছেলের দলে। কখনো কবিতা কিংবা পাগলা হাওয়ায় বন্ধু আসার বার্তা দেন গানের সুরে। আবার আকাশের কাছে মায়ের কথা জানতে চান গানের সুরেই। কথা হচ্ছে কিংবদন্তি গায়ক জেমসকে নিয়ে। দেশের অন্যতম এই রকস্টারের আজ জন্মদিন। ৫৯-এ পা রাখলেন আজ তিনি। শুভ জন্মদিন নগরবাউল জেমস। 

কেমন আছেন দেশের রক লিজেন্ড জেমস– জানতে চাইলে বলেন, 'আমি ভালো আছি।' আজ খ্যাতিমান এই কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিন। প্রতিবছরই দিনটি জেমসের শুরু হয় ভক্তদের শুভেচ্ছা, ভালোবাসা এবং উপহার পাওয়ার মধ্য দিয়ে। বরাবরের মতো এবারের জন্মদিনেও নিজ থেকে কোনো আয়োজন করছেন না জেমস। তিনি বলেন, 'বরাবরের মতো এবারো জন্মদিনে কোনো আয়োজন করছি না। তার পরও সবার ভালোবাসা আর শুভেচ্ছায় দিনটি কাটে।'

জেমসের পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। তবে সংগীতাঙ্গনে তিনি নগরবাউল এবং ভক্তদের কাছে 'গুরু' নামেও পরিচিত। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি এই তারকার জন্ম ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর আজকের দিনে। নওগাঁ জেলায় জন্ম নিলেও জেমস শৈশবে বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে।

বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় সব সময়ই চাইতেন ছেলে লেখাপড়ায় মনোযোগী হোক। কিন্তু ছেলের ইচ্ছা গায়ক হবেন। অনেকটা পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েই শুরু করলেন সংগীত চর্চা। বাবার সঙ্গে গান নিয়ে অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন ছোট কিশোর জেমস। 

সংগীতের নেশায় ঘর ছেড়ে এক অনিশ্চিত জগতে পাড়ি দেন। চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে থাকা শুরু করেন। সেখানে থেকেই তার সংগীতের ক্যারিয়ার শুরু। গান পাগল জেমস বন্ধুদের নিয়ে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'ফিলিংস' নামে একটি ব্যান্ড।

প্রথম অ্যালবাম 'স্টেশন রোড' দর্শকের কাছে পৌঁছাতে না পারলেও ১৯৮৮ সালে 'অনন্যা' নামের অ্যালবাম দিয়ে সুপারহিট হয়ে যান ঝাঁকড়া চুলের সেই স্বপ্নচারী ছেলেটা। এরপর ১৯৯০ সালে 'জেল থেকে বলছি', ১৯৯৬ 'নগর বাউল', ১৯৯৮ সালে 'লেইস ফিতা লেইস', ১৯৯৯ সালে 'কালেকশন অফ ফিলিংস' অ্যালবামগুলো ফিলিংস ব্যান্ড থেকে বের হয়। পরবর্তীতে 'ফিলিংস' ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে রাখেন নগর বাউল।

শুরু থেকেই গিটার বাজানোয় দারুণ পটু ছিলেন জেমস। আর তার কণ্ঠের মোহ সে তো অদ্বিতীয়। শুধু গানই গাওয়াই নয়, গান লেখার পাশাপাশি সুরও করেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নিজের লেখা গানের পাশাপাশি কবি শামসুর রাহমান, প্রিন্স মাহমুদ, সিবলির লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন জেমস। দেশ: দ্য লিডার, সত্তা সিনেমার জন্য গান করে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

নয়ের দশকের পুরোটা সময় তরুণদের কণ্ঠে শোনা যেত জেমসের বিখ্যাত সব গান। সুপারহিট সেই গানগুলো আজও মুগ্ধতা ছড়ায়। জেমসের গানের জনপ্রিয়তা শুধু দেশে নয়, পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। ক্যারিয়ারের সেরা সময় শুরু হয় বলিউডে আত্মপ্রকাশ করার পর। তার গাওয়া জনপ্রিয় হিন্দি গানের মধ্যে রয়েছে ভিগি ভিগি, চল চলে, আলবিদা, রিশতে ইত্যাদি।

জেমসের উল্লেখযোগ্য আরও কিছু জনপ্রিয় গান হলো- দুষ্টু ছেলের দল, বিজলি, বন্ধু আসবে বহুদিন পরে, তোমার দেখা নাই, আমি তোমাদেরই লোক, জনতা এক্সপ্রেস, তুফান, এত কষ্ট, আমি তোর মনের মতো হতে পারলাম নারে, তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম, জেল থেকে আমি বলছি, ফুল নেব না অশ্রু নিব বন্ধু, লিখতে পারি না কোনো গান আজ তুমি ছাড়া ইত্যাদি। 

একটা প্রজন্মের কাছে জেমস মানে এখনো এক উন্মাদনা, তার প্রতি ভক্তদের ভালোবাসা এতোটাই প্রবল যে ভক্তদের তিনি 'দুষ্টু ছেলের দল' বলে অ্যাখ্যায়িত করেন।

মানবকণ্ঠ/এফআই