
দেশে আলোচনায় এখন সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকার যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই প্রশ্ন উঠেছে- সংসদ নির্বাচন কতদূর? দেশের মানুষ সবকিছুর স্থিরতা চাচ্ছেন- তাই এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এদিকে সরকার গঠনের পর বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। এরমধ্যে কোনোটি দৃশ্যমান আবার কোনোটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার বা নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি।
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল ও দেশবাসী ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। এদিকে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রূপরেখা আগে থেকেই চাচ্ছে। তবে ধোঁয়াশা কাটতে শুরু করেছে। গত সোমবার রাতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে আশ্বাস দেন। ‘আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একমত হয়েছে সরকার। এই লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আর ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন ও সংস্কার সংক্রান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হতে পারে।’
এ আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান। বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক হিসাবেই দেখছে বিশ্লেষকরা। দেশে বর্তমান অস্থির সময় বিরাজ করছে। এখান থেকে উত্তরণ করা জরুরি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন- একমাত্র রাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। নির্বাচন না হলে দেশের সংকট-অনিশ্চয়তা কাটবে না। সংস্কারের ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি নেই। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া। তবে সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন। এখন দেখার বিষয় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয় কিনা। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে বলা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের প্রত্যাশা আর কেউ পূরণ করতে পারবে না। সেজন্য প্রথমত, প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। পরে সেই সংস্কার অনুমোদন করা হবে। তাই নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কোন পথে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়- দেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী আগে নির্বাচন পরে সংস্কার করা উচিত।
প্রশ্ন হচ্ছে- বর্তমান সরকার কি সহসায় নির্বাচনের পথে হাঁটবেন? দুঃখজনক হলেও সত্য সংস্কার বা নির্বাচন কোনো কিছুরই দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ইতোমধ্যে নানা বিষয়ে রাজনৈতিক দল এবং আদর্শের বিরোধ গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রত্যাশার তালিকায় যে প্রসঙ্গগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে প্রথমেই আসবে নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা জনগণের প্রধান প্রত্যাশা, যা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সময়ের দাবি। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা এবং জনগণের আস্থা অর্জনে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে প্রথমেই প্রয়োজন হবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। নির্বাচন কমিশনের সফলতা নির্ভর করবে তাদের প্রজ্ঞা, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার ওপর। কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে দৃঢ়তা ও সাহসিকতা থাকতে হবে। অতীতের ব্যর্থতাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সেগুলো অতিক্রম করার উদ্যোগ নিতে হবে।
নতুন সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা- তারা অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেবে। জনগণের কথা ভেবে নিকট অতীতের ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনে অবাধে ভোট দেয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই- সুস্থ, সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমাদের চাওয়া- সরকার সময়ক্ষেপণ না করে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। সর্বোপরি, সরকারকে কৌশলী হতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমলে নেবে- এমন প্রত্যাশা সবার।
Comments