Image description

বিভিন্ন অস্থিরতার রেশ না কাটতেই ব্যয় বৃদ্ধির চাপে ব্যবসায়ীরা। দেশের সব ব্যবসায়িক খাতে এমন অস্থিরতা বিরাজ করছে। কোনোভাবেই স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরছে না। এই সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে পণ্য ও সেবা বিক্রি কমে যাওয়ায় বিপরীতমুখী চাপে আছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে তাদের নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ নেই। বরং এখন কঠিন বাস্তবতার মুখে রুগ্ন ও সংকটে থাকা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে সরকারের কাছে নীতিমালা চান ব্যবসায়ীরা। 

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বিনিয়োগবান্ধব হতে পারেনি দেশ। এখনো একজন বিনিয়োগকারীকে দেশে বিনিয়োগ করতে হলে ২৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪১টি ছাড়পত্র নিতে হয়। এই জটিলতার পরও সরকারের দেয়া সেবার মূল্য ও কর বৃদ্ধি অব্যাহত। গত তিন বছরে গ্যাসের দাম ২৫০ শতাংশ থেকে প্রায় ৪৫০ শতাংশ বেড়েছে। এসবের সঙ্গে আছে উচ্চ সুদের হার, ঋণপত্রে জটিলতা, বেতন-বোনাস, উচ্চ উৎপাদন ব্যয় ও ডলার দর বৃদ্ধিতে এখন নাজেহাল অবস্থা। 

সার্বিকভাবে এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে অনেক উদ্যোক্তা ব্যবসা গোটাতে চাচ্ছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি স্বরূপ। এই পরিস্থিতিতে এ খাতের ইমেজ পুনরুদ্ধারে শিল্পের নিরাপত্তার পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা চাইছেন ব্যবসায়ীরা। চলমান পরিস্থিতি তাদের আস্থা কমিয়েছে। এরই মধ্যে সময়মতো পণ্য না দিতে পারায় বিভিন্ন দেশ থেকে অর্ডার কমেছে। নিরাপত্তা সংকট ও শ্রমিক বিক্ষোভ বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এ খাত মুখ থুবড়ে পড়বে। 

প্রশ্ন হচ্ছে- কার স্বার্থে এমন অস্থিরতা? দেশের এই পরিস্থিতিকে এমন তর্কে যাওয়ার সময় নেই। দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। সরকার ও ব্যবসায়ীরা আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছাতে না পারলে ক্ষতির কবলে পড়বে দেশের অর্থনীতি। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বিদেশি ক্রেতারা, দিচ্ছেন না নতুন অর্ডার। সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

এ সংকট দ্রুত সমাধান করা সম্ভব না হলে দেশের পুরো শিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। দেশে এ সংকট মুহূর্তে পরিবর্তিত রাষ্ট্রে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সবকিছু আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এ দেশ আমার, আমাদের। তাই রপ্তানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সবকিছু আবেগে না করে বিবেক খাটিয়ে করতে হবে। 

ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে এদেশে ‘গণঅভ্যুত্থান’ ঘটেছে, এ বিষয়টি এত সহজে ভুলে গেলে চলবে না। সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বুদ্ধিভিত্তিক উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির তিন প্রধান চালিকা শক্তির একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। অবিলম্বে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সার্বিক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি মহল অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের দ্রুত চিহ্নিত করা জরুরি। শিল্প বাঁচলে দেশের অর্থনীতি বাঁচবে, দেশ বাঁচবে- দেশের মানুষ বাঁচবে।  তাই সময়ক্ষেপণ না করে- এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।