‘যে লাউ সেই কদু’- বিগত সরকারের বিদায়ের পরেও এ বাক্যটি অর্থবোধক হয়ে উঠছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি হতো আর এখন ভাঙানো হচ্ছে অন্য নাম। এসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে বড় রাজনৈতিক দলগুলো ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিলেও চাঁদাবাজি কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না, শুধু হাতবদল হয়েছে। নেপথ্যে থেকে তো বটেই, প্রকাশ্যেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী পরিচয়ে, এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পরিচয় দিয়েও চাঁদাবাজির খবর আসছে। চাঁদাবাজদের সবচেয়ে বড় টার্গেট পয়েন্ট হচ্ছে শিল্পাঞ্চল, বাণিজ্যিক এলাকা, বাস ও নৌ-টার্মিনাল, বালুমহাল ও হাট-বাজার। অবস্থা এতই বিপজ্জনক যে- অনেক জায়গায় হত্যার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের মতো ঘটনা ঘটে গেলেও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের অবসান হয়নি। এতে করে দেশের ব্যবসায়ীরা ভীষণ উদ্বিগ্ন। জনগণের প্রত্যাশা ছিল ভিন্ন। পটপরিবর্তনে সঙ্গতকারণেই প্রত্যাশা ছিল- এবার চাঁদাবাজি-দখলবাজির অবসান ঘটবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং দেশজুড়ে হঠাৎ করেই শুরু হয় বিভিন্ন পর্যায়ে নানারকম চাঁদাবাজি-দখলবাজি। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ছাড়াও অনেক সংগঠন ও গোষ্ঠীর ব্যানারেও বিভিন্ন কৌশলে এহেন অপকর্ম শুরু হয়।
শুধু তাই নয়- চাঁদা না দিলে শিল্প-কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এমন কী চাঁদাবাজরা চাঁদা না পেলে দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা এবং প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ধাক্কায় কেবল চেহারায় বদল ঘটেছে, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। আগের মতোই সারা দেশে তাদের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। চাঁদাবাজির কারণে নিয়ন্ত্রণে নেই বাজার, ফলে কমছে না ভোগ্যপণ্যের দাম। উল্টো চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ অনেক ভোগ্যপণ্যের জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য- সরকার বদলের শুরুর দিকে কিছুটা বিরতি দিয়ে নতুন পরিচয়ে আবার মাঠে নেমেছে চাঁদাবাজরা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সেই সরকারের পতনের পর নির্যাতিতরা ভেবেছিল তাদের ভাগ্যে বোধ হয় পরিবর্তন আসবে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা ঘটেনি। সব জায়গায় আবার নতুন করে শুরু হয়েছে দখল ও চাঁদাবাজি। প্রশ্ন হচ্ছেÑ প্রশাসন, বিশেষত পুলিশ প্রশাসন কী করছে? রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের অনেক দিন পার হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম দু-চার দিন সুযোগ সন্ধানীরা অনিয়মের রাজত্ব চালালে হয়তো তেমন কিছু করার ছিল না। কিন্তু দুই মাস পরেও যদি চাঁদাবাজদের অরাজকতা চলতে থাকে, তাহলে এর দায় অবশ্যই প্রশাসন, তথা সরকারকেই নিতে হবে।
পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দেয়ার পরেও শৃঙ্খলা কেন ফিরছে না- এমন প্রশ্ন ওঠাও অস্বাভাবিক নয়। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সর্বস্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন দেশবাসীকে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসেনি। আমরা মুখে বলছি নতুন বাংলাদেশ অথচ সমাজের খারাপ নিয়মগুলো বহাল তবিয়তেই থেকে যাচ্ছে। এমনিতেই চড়া দ্রব্যমূল্যের কারণে সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষ দুর্ভোগে জীবন কাটাচ্ছেন। চাঁদাবাজির কারণে দ্রব্যমূল্য আরও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এভাবে চললে- ‘যে লাউ সেই কদু’তেই পরিণত হবে।
অবিলম্বে চাঁদাবাজি দখলবাজি থেকে মানুষ মুক্তি চান। তাই সময়ক্ষেপণ না করে দেশের সর্বত্রই ব্যবসায়ীদের-চাঁদাবাজদের কবল থেকে মুক্ত করতে সরকারের এগিয়ে আসা জরুরি। এখনই সময় এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার। দখলদার, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ যে দলেরই হোক না কেন, হোক না প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী, তাদের সমূলে উৎপাটন করতে হবে। পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে, খতিয়ে দেখে মামলা থেকেও মুক্ত করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিশীল ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং কোনোভাবেই যেন ‘যে লাউ সেই কদু’ না হয়- এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
মানবকণ্ঠ/এসআরএস
Comments