
হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি করছে। রাজনীতির মূল লক্ষ্য যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। সেখানে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে চাকরির পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, ক্লাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারছে না। শুধু তাই নয়, সে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হচ্ছে। করোনা মহামারি সময় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় আঘাত হেনেছিল। দুই বছরের বেশি সময় স্কুলের বাইরে থাকতে হয়েছে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীকে। বন্ধ ছিল সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনলাইনে পাঠদান আর বাড়ির কাজ চললেও তা খুব কার্যকর হয়নি। করোনার সেই সংকট পুরোপুরিভাবে কাটিয়ে ওঠার আগেই এরই মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল-অবরোধ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বছরের শেষ সময় পরীক্ষা-মূল্যায়ন ও নতুন স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। প্রস্তুতি চলছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার। শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে এসব কর্মসূচির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ। অগ্নিসন্ত্রাস, বাস-ট্রেনে আগুন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে ফেলছে বাড়তি চাপ। ফলে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অজানা শঙ্কা। চলতি বছরের শেষদিকে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের শঙ্কা ছিল। প্রস্তুতি হিসেবে আগেভাগেই বই ছাপা ও বার্ষিক পরীক্ষা এগিয়ে এনেছে সরকার। বছরের শেষ ও শুরুর সময় বার্ষিক পরীক্ষা, মূল্যায়ন, নতুন স্কুলে ভর্তি, বই উৎসবের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। চলমান হরতাল ও অবরোধে শিক্ষা ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশেষত সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল, নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল, সিরাজদিখান উচ্চ বিদ্যালয়সহ দেশের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্কুলে এবং সড়কে মানববন্ধন ও র্যালি করেছে। মানববন্ধনে তাদের অন্যতম দাবি ছিল- নিরাপদে ক্লাসে যেতে চাই, চাই শিক্ষার পরিবেশ ও নিরাপদ শিক্ষাজীবন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি মাসেই শেষ হবে বার্ষিক পরীক্ষা। এরপর শুরু হবে নতুন শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম। ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষায় বসবে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রভাব ফেলবে এই পরীক্ষার্থীদের ওপরও। এর মধ্যে হরতাল-অবরোধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজের পরীক্ষাও পিছিয়ে গেছে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো সেভাবে প্রভাব পড়েনি, কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে। আর বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই হরতাল-অবরোধে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। রাজধানীর স্কুলগুলোর অভিভাভকদের অভিযোগ, সামনে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা। প্রতিটি মুহূর্ত শিক্ষার্থীদের জন্য মূল্যবান। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে স্কুলে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। এর সঙ্গে আবার অনেক স্কুল জরিমানাও করছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনবান্ধব কর্মসূচি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলেও অভিভাবকরা সন্তানদের পাঠাতে ভয় পান। এই সংকট শুধু অভিভাবকদেও আমরা তা মনে করি না। এই সংকট সারাদেশের শিক্ষার। শিক্ষা বিপর্যস্ত হলে বিপর্যস্ত হবে একটি প্রজš§। যারা করোনায় একবার বিপর্যস্ত হয়েছে, আবার তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সংকটে পড়ছে। এই সংকট কাটাতে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ সব রাজনৈতিক দলেরই দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনই।
শান্তিনিকেতন
শান্তিনিকেতন ১৮৬৩ সালে আশ্রম হিসেবে এর যাত্রা শুরু। রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিনহার কাছ থেকে বিশ বিঘা জমি কিনে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পশ্চিম বাংলার বীরভূম জেলার অন্তর্গত বোলপুরের কাছে এই আশ্রম অবস্থিত। জাগতিক করণীয় কর্ম থেকে মুক্ত হয়ে প্রার্থনায় সময় কাটানোর জন্য গৃহী ব্যক্তিদের নির্জন আশ্রয় দান করা ছিল এই আশ্রমের উদ্দেশ্য। ১৮৮৮ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট- একটি অতিথিভবন, প্রার্থনা কক্ষ এবং ধর্মীয় সাহিত্যের জন্য নিবেদিত গ্রন্থাগারের সংস্থান করেছিলেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন আশ্রমে শিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এর ঠিক আগে পারিবারিক জমিদারির ব্যবস্থাপনার কাজে তিনি পদ্মা তীরের শিলাইদহে দশ বছর কাটিয়েছিলেন। জমিদারির ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে তিনি গ্রামের মানুষের জীবনযাপন প্রণালি সম্পর্কে অবহিত হন এবং তা তাকে সমাজের জন্য গঠনমূলক কিছু করতে আগ্রহী করে তোলে। শিক্ষা এবং গ্রামীণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রকে বেছে নিয়ে তিনি শিলাইদহে তার কার্যক্রম শুরু করেন এবং পরে স্থান পরিবর্তন করে শান্তিনিকেতনে চলে আসেন। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ একটা আদর্শ স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। বাল্যকালে তাকে যেসব স্কুলে পাঠানো হয়েছিল সেগুলো সম্পর্কে তিনি খুশি ছিলেন না। তিনি মনে করতেন যে, ইংরেজি স্কুলগুলো ছিল ভারতীয় জীবনধারা, সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। শান্তিনিকেতনকে বেছে নেওয়ার পেছনে তার তিনটি স্পষ্ট লক্ষ্য ছিল: প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে আদর্শ প্রাকৃতিক পরিবেশে শিশুদের বেড়ে ওঠা; পরিবর্তনশীল ভারতে শহর ও গ্রামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে শিক্ষা দান; এবং বৃহত্তর বিশ্বকে গ্রহণের উপযুক্ত করে তোলার জন্য জ্ঞানদান করা। স্বদেশী আন্দোলনের সময় শান্তিনিকেতন স্কুল শুরু হয়েছিল। (তথ্য: ইন্টারনেট)।
Comments