Image description

দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের বিপর্যয় আরো গভীর হয়েছে।  দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার শুরুটা গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। ওই সময় আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশি দামে ডলার বেচাকেনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে দেশি-বিদেশি ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণও করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব তৎপরতার মুখেই গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক ধাক্কায় প্রায় ৫০ কোটি ডলার কমে যায়।

চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। নিকট অতীতে কোনো মাসে এত কম রেমিট্যান্স প্রবাহ দেখা যায়নি। যদিও গত আড়াই বছরে ২৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ জন বাংলাদেশি নতুন করে বিদেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়েছেন। মাসের শেষ আট দিনে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসতে পারে। সেটি হলে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ হতে পারে ১৪৫ কোটি ডলার। এটি হবে গত তিন বছরের মধ্যে এক মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স প্রবাহ। বর্তমানেও বেশি দামে ডলার বেচাকেনা ঠেকাতে দেশের ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলমান বিশেষ অভিযানের মধ্যেই রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। দেশের একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা বলেছেন, ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভুল নীতিতে চলছে। ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নামে ব্যাংকগুলোয় আতঙ্ক তৈরি করেছে। এ কারণে রেমিট্যান্সের বাজার আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশে হুন্ডির বাজার এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। হুন্ডির বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরাও অনেক প্রভাবশালী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো প্রভাবশালী হুন্ডি কারবারিদের বিরুদ্ধে কিছুই করছে না। তারা ভাসমান বিদেশি মুদ্রা বিক্রেতা ও কিছু মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান চালিয়ে হুন্ডির বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ ধরনের লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে হুন্ডির বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। ব্যাংক খাতে গতকাল প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও খুচরা বাজারে (কার্ব মার্কেট) প্রতি ডলার ১১৭-১১৮ টাকায় লেনদেন হয়েছে। ব্যাংকের তুলনায় খুচরা বাজারে বেশি দাম পাওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা হুন্ডির মাধ্যমে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

হুন্ডির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহের বিপর্যয় থামানো যাবে না বলে জানান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আবার ধীরে ধীরে ডলারের বিনিময় হারও বাড়ানো হচ্ছে। ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়লে কার্ব মার্কেটেও বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে ডলারের বাজার স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে না। বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে প্রভাবশালী হুন্ডি কারবারিদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হলে তবেই হুন্ডির বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।

মানবকণ্ঠ/এআই