Image description

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন সেটা আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আরো স্পষ্ট হয়েছে। এমন অবস্থা হলে পথে চলাচলকারী কেউ নিরাপদ নন। দেশের রাজধানী শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া তো দূরের কথা, এ ঘটনার হোতারা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অন্যদিকে একটি পরিবার সবার চোখের সামনে নিঃস্ব হয়ে গেল তার দায়ভার কে নেবে? গণমাধ্যমে ভুবন চন্দ্র শীলের স্বজনদের আহাজারি কাউকে কি স্পর্শ করবে? এ ধরনের দৃশ্য আমাদের কাম্য নয়। অন্যদিকে নিহত ভুবনের স্ত্রীর বড় ভাই পলাশ মজুমদার বলেন, ‘নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ভুবন। অথচ সরকারের কোনো সংস্থা তার খোঁজ নেয়নি। কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। তাহলে তাদের পরিণতি কী হবে?

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেডের অফিস থেকে মতিঝিলের আরামবাগের মেসে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন ভুবন চন্দ্র শীল। এদিন রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের গাড়ি ঘিরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। এ সময় মামুন গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড় দিলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। তাদের ছোড়া গুলিই মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন ও পথচারী আরিফুল হক ইমনকে বিদ্ধ করে। ঘটনার পর থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

স্বামীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনেই ঢাকায় চলে আসেন নোয়াখালীর অরুণচনন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা রত্না। এক সপ্তাহ উৎকণ্ঠায় কাটানোর পর তারা গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ভুবনের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তার মেয়েকে চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাওয়ার কথা ছিল। এখন তো সবই শেষ।

এ সময় স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে তিনি বলেন, ‘কে গুলি করেছে জানি না। আমার স্বামীকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু ওর খুনিদের বিচারটা যেন হয়। এভাবে আর কোনো সন্তানকে যেন পিতৃহারা হতে না হয়।’ একজন নাগরিকের সড়কে চলাচলের যে সার্বিক পরিস্থিতি নেই সেটা স্পষ্ট। রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে চলাফেরা করবে। আরেক দল তাকে শিকারের জন্য গুলি ছুড়বে সে গুলিতে নিরপরাধ পেশাজীবী নিহত হবে এটা সেই আদিম সময়ের শিকার করার মতো ঘটনা। এ ধরনের পরিস্থিতি কোনোমতেই কাম্য নয়। কিন্তু এখনও সবাই ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

ভুবনের পরিবারের সর্বস্ব তো গেছেই, তারপর হত্যাকারীদের বিচার হবে এমনও কোনো অবস্থা এখনও দেখা যায়নি। তাহলে মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা কোথায়? দেশের রাজধানী শহর সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ ঘটনা এক দুই মিনিটে ঘটেছে তাও নয়। তাহলে এর মধ্যে এই সড়কে কোনো আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা ছিলো না কেন সেটা সহসাই প্রশ্ন জাগে। জনগণের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি যদি নিশ্চিত না হয় তাহলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে সেটা অনুমেয়। বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই, সড়কে নিয়ন্ত্রণ নেই তাহলে জনগণ ভরসা করবে কার ওপর? আমরা মনেকরি, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার সঙ্গে ভুবন চন্দ্র শীলের পরিবারের সদস্যদের জীবন-যাপনের সব ধরনের নিশ্চয়তা দেয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আন্তরিক হবে- এ প্রত্যাশা নিহত ভুবন চন্দ্র শীলের পরিবারের সঙ্গে আমাদেরও।

মানবকণ্ঠ/ এআই