Image description

ভয়াবহ আকার নিয়েছে ডেঙ্গু। সরকারি হিসাবেই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে চলতি বছর এ পর্যন্ত ৯০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৮৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবে প্রাণহানি ও আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের পাঁচগুণেরও বেশি। এককথায় বলতে হয়, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এরপরও ঘুম ভাঙছে না সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি, এমনকি জনসাধারণেরও। কাজেই প্রশ্ন জেগেছে, ডেঙ্গু আর কতটা ভয়াবহ হলে, আর কত মৃত্যুর পর আমাদের ঘুম ভাঙবে? স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা। কিন্তু মশক নিবারণে এ দপ্তরের কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি।

২০১৯ সালে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেড়ে যাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তখন সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওলবাকিয়া পদ্ধতির কথাও ভাবা হয়। এছাড়া ড্রেনে গাপ্পী মাছ অবমুক্ত করা, ব্যাঙ অবমুক্ত করা, পুকুরে হাঁস পালন, ড্রোন দিয়ে সার্ভে ইত্যাদি নিয়েও আলোচনা হয়। অধিকতর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ শেষে সেখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন দেখিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সব প্রচেষ্টাই অকার্যকর হয়েছে। ডেঙ্গু এখন ঢাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে সারাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র প্রকাশ করেছে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তারা অন্যান্য সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তারা বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে বিধায় মশাও বেড়েছে। আমাদের মশক নিধন কার্যক্রম  জোরদার করলে এ অবস্থায় রূপ নিতে পারতো না।

ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো প্রোগ্রাম চোখে পড়েনি। কাজেই জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এটি নিয়ন্ত্রণে কত বছর লাগবেÑ এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদগুলো এখনো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ভাবনাই ধারণ করতে পারেনি। পৌরসভা, জেলা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে নেই কোনো মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুম ভাঙতে হবে জনপ্রতিনিধিদের। তারা এখনো প্রশিক্ষণ আর অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্যেই রয়ে গেছেন!

আগে  ঢাকার বাইরে এতটা ছিল না। অযত্ম-অবহেলায় এখন ডেঙ্গু সব জায়গায় ছড়িয়ে গেছে।  এখন শুধু জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের লোক কাজ করলে হবে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রত্যেকটি মানুষকে সতর্ক হতে হবে। প্রত্যেকে যার যার ঘর পরিষ্কার রাখলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে। যে সকল দেশ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে তাদের মতো নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতেই কাজ করা জরুরি। আমাদের সেটা করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এখনো এ পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু মহামারি আকার নেবে তখন করার কিছুই থাকবে না। তাই এডিস মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেয়ার বিকল্প নেই।

মানবকণ্ঠ/এআই