Image description

ঋতু বৈচিত্র্য ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আষাঢ়ের আবহাওয়া এখন শরতের শেষ দিকে এসে দেখা দিয়েছে। ফলে বৃষ্টি প্রতিদিন হচ্ছে। তবে গত বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টি ঝরেছে অঝোর ধারায়। নগরীর বৃষ্টির পানি গতকাল দুপুরেও পুরোটা সরেনি। রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার সড়ক ছিল পানির নিচে। নিউমার্কেটে পানি জমে থাকায় ব্যবসায়ীরা সারাদিন দোকান খুলতে পারেননি। জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা দেখে ২০১৭ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার

মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, ‘আমি প্রমিজ (অঙ্গীকার) করছি, সামনের বছর থেকে আর জলাবদ্ধতা দেখবেন না।’ মন্ত্রীর (সাবেক) এ ঘোষণার পর ছয় বছর পেরিয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এসেছেন নতুন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ঢাকা ওয়াসার হাত ঘুরে জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব গেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে। খাল খনন ও নর্দমা নির্মাণে দুই সিটি করপোরেশন শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা থেকে ঢাকাবাসী মুক্তি পায়নি। বরং জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে ঢাকার মেয়ররা সাফল্যের দাবি করছেন।

সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে দক্ষ জনবল নিয়ে তিল পরিমাণ কাজ করেনি। নিউমার্কেটে গতকাল সন্ধ্যায় নালা পরিষ্কারের যন্ত্র সাকার মেশিন এনে পানি সরানোর কাজ শুরু হয়। তবে ব্যবসায়ীরা সারাদিন দোকান খুলতে পারেননি। শুক্রবার ছুটির দিনের কেনাবেচা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। ঢাকা রাজধানী শহর। এখানে জলাবদ্ধতা হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পরও পানি নামবে না, এটা কেমন কথা?

নগরবিদরা বলছেন, দুই সিটি যা করছে, তা ‘টোটকা’ ব্যবস্থা। জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কমাতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব সুস্পষ্ট। প্রকৃতিকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু টাকা খরচ করা হচ্ছে। রাজধানীতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এটা এ মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। তবে এমন বৃষ্টি প্রায় প্রতিবছরই হয়।

এবারের বৃষ্টির একটি দিক হলো, এটি হয়েছে ৬ ঘণ্টায়। এতে রাজধানীতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাজধানীর অনেক সড়ক ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলাবদ্ধ থাকে। পানি এত বেশি ছিল অনেক সড়কে যানবাহন বিকল হয়ে পড়েছিল। ২০২১ সালের আগে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। তখন বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ডুবে গেলে সিটি করপোরেশন ঢাকা ওয়াসার ওপর দায় চাপাত।

এরপর ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসা আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব (খাল ও ড্রেনেজ) নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। বৃষ্টির পানি সড়কের নিচের অংশের নালা হয়ে খাল ও নদীতে গিয়ে পড়ে। সেই নালার অবস্থা করুণ। খালের তলায় মাটি জমে গভীরতা কমে যাওয়ায় পানির ধারণক্ষমতা কমে গেছে। কিন্তু আমাদের নগরপিতারা জলাবদ্ধতার ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে ১৫ মিনিটে পানি সরে যাওয়ার কথা বলেছেন কিন্তু তারপরে ১৫ ঘণ্টায় পানি না সরলে সে দায়ভার কার? আমরা মনেকরি, জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরিভাবে কাজ করার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে- এ প্রত্যাশা আমাদের।

মানবকণ্ঠ/এআই