
একটি সমাজ কতটা অগ্রসর তার প্রথমিক দিকটাই হচ্ছে ওই সমাজের শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতা কতোটা অগ্রসর। আমাদের দেশে নারীর অধিকার নিয়ে অনেক কিছুই বলার আছে। তবে এটা ঠিক আমাদের দেশের অফিস-আদালত থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাঠ থেকে সমাজের উচ্চ পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন দিন দিন বাড়ছে।
তারমধ্যেও এডুকো পরিচালিত ‘বাংলাদেশে কিশোরীদের ওপর জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছে যে, ৭১ শতাংশ কিশোরী স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। আর ৫২ শতাংশ কিশোরী মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। গত সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সভায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৮৭ শতাংশ কিশোরী হেনস্তা, মৌখিক হয়রানি এবং ইভটিজিংয়ের শিকার। ৭৩ শতাংশ কিশোরী পারিবারিক ও বাল্যবিবাহজনিত উদ্বেগ, ৬৬ শতাংশ মানসিক আঘাত (ডিসরাপশন), ২২ শতাংশ শারীরিক আঘাত, ৬০ শতাংশ ট্রমা, ৫৫ শতাংশ ভয়ের অনুভূতির মধ্যে দিন কাটায়। জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার কারণে ৬৯ শতাংশ কিশোরী আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে, ২৬ শতাংশ আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। দেশে শতকরা ৩৯ ভাগ কিশোরী মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর ৩২ ভাগ শারীরিক নির্যাতন, ১৪ ভাগ যথাক্রমে যৌন এবং অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
এ ছাড়াও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার জন্য নির্যাতনের শিকার শতকরা ৫৫ দশমিক ২০ ভাগই বন্ধু বা সহপাঠীকে দায়ী করা হয়েছে। কিশোরীদের ওপর জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে ঢাকা শহর, ময়মনসিংহ ও ঠাকুরগাঁও জেলায় এই গবেষণা পরিচালনা করে এডুকো বাংলাদেশ। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, শতকরা ৫৪ দশমিক ৯ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন বাল্যবিয়ে হলো সবচেয়ে ভয়াবহ প্রকারের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা।
শতকরা ৫৫ দশমিক ২০ ভাগ উত্তরদাতা বন্ধু বা সহপাঠীকে, ৪১ দশমিক ৮০ ভাগ উত্তরদাতা প্রতিবেশীকে এবং ২৯ দশমিক ৭০ ভাগ উত্তরদাতা নিকটতম আত্মীয়কে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার জন্য দায়ী করেন। এ ছাড়াও আমাদের দেশে অনলাইনে শিশুরা হরহামেশাই হয়রানির শিকার হয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে একথা একদম সঠিক। দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি একেবারে চরম নয়।
অনেক জায়গায় ভুল তথ্যও প্রকাশ করা হয়। তারমধ্যেও শেলটার হোমের অপর্যাপ্ততা আমাদের একটি বড় দুর্বলতা। অনেকেই আশ্রয় হারাবার শঙ্কায় আইনগত ব্যবস্থা নেয় না।
আমাদের দেশে নারী ও শিশু সুরক্ষায় যত আইন আছে, অনেক দেশেই এত আইন নেই। কিন্তু এত আইন করেও কিছু হবে না, যদি তা বাস্তবায়ন করা না যায়। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেলে শিশুরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও আমরা আমলে নেই না এমন ঘটনা হরহামেশাই দেখা যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে বাজেট বাড়ানো একান্ত জরুরি। তবে সেসব সংকট নিরসনে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে।
নয়তো নারী ও শিশু নির্যাতন, কিশোরী হয়রানি বন্ধ হবে না। আমরা মনেকরি, সমাজে নারীর অবস্থানকে খাটো করে বা অবলীলাক্রমে দেখার মানসিকতা না বদলালে এই নির্যাতনের শেষ বা নির্মূল করা কোন মতেই সম্ভব হবে না। একটা মেয়ে নির্যাতনের শিকার হলে পরিবার থেকে সমাজ মেয়েটিকেই দায়ী করে। ঘটনা চেপে রাখারও চেষ্টা চলে অবিরাম। এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে দরকার একটি সামাজিক বিপ্লব। সেটা পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে।
মানবকণ্ঠ/এআই
Comments