Image description

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমানত বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে ব্যাংকগুলোতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা নতুন আমানত জমা পড়েছে, যা অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত।

মার্চ মাস শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এই পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা, যা প্রায় ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।

গত বছরের একই সময়ের (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৩) তুলনায় আমানত বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ২০২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মার্চ শেষে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।

এই সময়ে গ্রামীণ এলাকায় আমানত প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা গেছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে গ্রামীণ অঞ্চলে আমানত বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি, যেখানে শহরাঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৯৪ শতাংশ। তবে, মোট আমানতের অধিকাংশই এখনো শহরকেন্দ্রিক। মার্চ শেষে শহরাঞ্চলের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের প্রায় ৮৪ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ এক হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমানতের সঙ্গে সুদহারও বেড়েছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে গড় সুদহার ছিল ৬.০৪ শতাংশ, যা মার্চ শেষে বেড়ে ৬.২৫ শতাংশ হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সুদহার বৃদ্ধিই আমানত প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতে আস্থার পুনরুদ্ধার এই প্রবৃদ্ধির একটি বড় কারণ। আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জনগণের আস্থা কমে গিয়েছিল। বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দেয় এবং কিছু ব্যাংক আমানত ফেরত দিতেও ব্যর্থ হয়। সরকারও ব্যাংক খাত থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে অর্থ ধার করায় সুদহার বেড়ে যায়, যার ফলে আমানতের প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়েছিল।

তবে, গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একাধিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তনের পর নতুন ব্যবস্থাপনা আমানত সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তারা সুদহার বাড়িয়ে নতুন আমানত আকর্ষণ করে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ নেয়। এর ইতিবাচক প্রভাব সামগ্রিক আমানত প্রবৃদ্ধিতে পড়েছে।

আমানতের পাশাপাশি এই তিন মাসে ব্যাংক খাতে ঋণও বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। গত প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এই পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা বা ১.৭৭ শতাংশ।

ঋণের ক্ষেত্রেও শহর ও গ্রামের মধ্যে বড় পার্থক্য দেখা গেছে। মার্চ শেষে মোট ঋণের ৯২ শতাংশ, অর্থাৎ ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা গেছে শহরাঞ্চলে। অন্যদিকে, গ্রামীণ অঞ্চলে গেছে মাত্র এক লাখ ৩৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের মাত্র ৮ শতাংশ।