
বরিশালে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদকের ভয়াবহতা। এর ফলে বাড়ছে মাদকাসক্তির সংখ্যাও। আর মাদকের ব্যবহার রোধে নেই তেমন কোন আপাতদৃষ্ট পদক্ষেপ। ফলে দিন দিন ধ্বংসের দিকে দাবিত হচ্ছে যুবসমাজ।
জানা গেছে, পারিবারিক কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, খুন, ধর্ষণসহ গুরত্বর অপরাধ গুলো মাদকাসক্তির কারণে সংগঠিত হচ্ছে। মাদকের ভয়াবহতা অনুবাধন করে মাদকাসক্তি প্রতিরোধের পক্ষ্যে দি নিউ লাইফ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ৬ বছরে এই কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ১৩০০ জন পুরুষ এবং ১৫০ জন নারী মাদকাসক্ত ও মানসিক অসুস্থ্য ব্যক্তিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য হয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে কেন্দ্রটিতে নারী ও পুরুষ সহ ১৫০ জন মাদকাসক্ত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্তায় সুস্থতার পথে রয়েছেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) নগরীর পুলিশ লাইন রোড¯’ একটি রেস্টুরেন্টে মাদকবিরোধী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দি নিউ লাইফ’ ও নারী বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘জাগো নারী’ উদ্যোগে বরিশালের সাংবাদিক, আইনজীবী, এনজিও প্রতিনিধি সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের নিয়ে মাদকাসক্তি রোধে চিকিৎসা ও করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য উঠে আসে।
বরিশাল মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, বরিশালে ৫টি এবং পটুয়াখালীতে ২টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বরিশালে সরকারিভাবে মাদক নিরাময় কেন্দ্র না থাকায় এই ৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে বরিশালের মাদকাসক্তদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বরিশাল বিভাগীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগে গত বছর মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৭০ টি। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে ১৫০ এর উপরে মামলা হয়েছে। মাদকের নিয়ন্ত্রণে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তরটি।
চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ অভিভাবক এবং আসক্ত ব্যক্তিরা মাদকাসক্তি চিকিৎসা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই। এর ফলে তারা চিকিৎসা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেন। মাদকাসক্তির চিকিৎসা সম্পর্কে সকলকে সঠিক ধারণা দিতে হবে। এরফলে আসক্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসা গ্রহণে ই”ছুক হবে এবং সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চিকিৎসকদের মতে, একজন ব্যক্তি মাদকদ্রব্য সেবন বা ব্যবহার করার পর তৃপ্তি লাভের আকাঙ্খায় ক্রমশই মাদক ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধি করে। একপর্যায়ে তার শরীরের ধীরে ধীরে সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এরফলে ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পরে। এ সময় সঠিক চিকিৎসা পেলে ওই ব্যক্তি মাদক মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে যেতে পারে।
জানা গেছে, বরিশালে ৪ টি মদের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল, গলাচিপা, কলাপাড়া, পিরোজপুরে মদের দোকান রয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী ও ঝালকাঠির মদের দোকানসহ ৭টি দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ড বলেন, মাদক নিরাময়ের ক্ষেত্রে সবার আগে নিজ পরিবারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। পিতা মাতার সন্তানকে সময় দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, শুধু প্রশাসন করাকরি করে এটা নির্মূল করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি সন্তানকে খেলা ধুলাতে উৎসাহিত করার পরামর্শ দেন।
দি নিউ লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক মর্তুজা জুয়েল এর সঞ্চালনায় গোর টেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, বরিশাল জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তানভীর হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম ফরিদ, মুক্তিযোদ্ধা অরূপ তালুকদার, জাগোনারী সম্পাদক ও প্রকাশক গোপাল সরকার, বরিশাল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক মুরাদ আহমেদ, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ সহ অনেকে।
Comments